কলকাতা পুরসভায় অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদে কে বসবেন, তা নিয়ে ‘দ্বিধা’য় পুর বোর্ড। রীতি অনুযায়ী ওই পদের দাবিদার বিরোধী দলের কাউন্সিলর, যদিও ২০১৫ সালে কলকাতা পুর নির্বাচনের পরে অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদে বসানো হয় সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপি ঘোষকে। তিনি অবশ্য ভোটে জিতেছিলেন বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। তখনই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব বিরোধী দলের কাউন্সিলরকে দেওয়া হল না কেন? মেয়রের জবাব ছিল, ‘‘যাঁকে দেওয়া হয়েছে, তিনি তো বিরোধী দলেরই। উনি তো বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন।’’
যদিও বিজেপি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তাঁদের দলের প্রতীকে জেতা বাপি ঘোষকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু দলের তরফে তেমন কোনও চিঠি পুরসভায় দেওয়া হয়নি। আর সেই সুযোগেই মেয়র বাপি ঘোষকে চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছিলেন। এ বার অবশ্য সেই ভুল করেনি বিজেপি। নতুন কমিটি হওয়ার আগেই ১২ মে পুর প্রশাসনের কাছে বহিষ্কারের চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে তারা।
এক বছরের সময়সীমার পরে সেই কমিটির কার্যকাল সম্প্রতি শেষ হয়েছে। ফের কমিটি গঠনের জন্য পুর প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি জারি করে। গত বারের মতো এ বারেও ভোট হবে ধরে নিয়ে মনোনয়নের নোটিসও জারি হয়। তবে সাত সদস্য-বিশিষ্ট কমিটির জন্য সাত জনই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাই সকলেই সদস্য হয়েছেন। পুরসভা সূত্রের খবর, তৃণমূলের পাঁচ জন, কংগ্রেসের এবং বামফ্রন্টের এক জন করে রয়েছেন। এ বারও তৃণমূলের পক্ষে নির্বাচিত হয়েছেন বাপি ঘোষ। এবং তাঁকেই ফের ওই পদে নিয়োগ করার সিদ্ধান্তও প্রায় পাকা। তা বুঝেই বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় পুর প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপিবাবু এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসীম বসুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রতাপবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের বিরোধী দেখিয়ে পুরসভায় বিরোধীদের প্রাপ্র্য কিছু কিছু সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছিল তৃণমূল বোর্ড। সেটা যাতে না করতে পারে, তার জন্য ওঁদের বহিষ্কারের কথা জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, আজ মঙ্গলবার পুর অধিবেশনে নতুন কমিটির প্রস্তাব অনুমোদিত হবে। পরে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করার কথা সেই বাপিবাবুকেই। কিন্তু বিজেপি-র চিঠি পাওয়ার পরে কী ব্যবস্থা নেয় পুর প্রশাসন, তা দেখার অপেক্ষায় বিরোধীরাও। এক আমলার কথায়, বাম আমলে তৃণমূলের অতীন ঘোষ ওই পদের দায়িত্বে ছিলেন। এখন বিরোধী দলের হাতে ওই পদ দেওয়া হয় কি না, তা দেখার অপেক্ষায় সকলেই। এমনও হতে পারে, কংগ্রেসের যে সদস্য কমিটিতে এসেছেন, আপাতত তাঁর কপালেই শিকে ছিঁড়ল। এমনটাই মনে করছেন শাসক দলের কেউ কেউ।