ছবি: সংগৃহীত।
গঙ্গা তীরবর্তী এলাকায় জমে থাকা আবর্জনা সরানো নিয়ে ‘চাপানউতোর’ শুরু হয়েছে রাজ্য সরকার ও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর (কলকাতা বন্দর) কর্তৃপক্ষের মধ্যে।
নবান্ন সূত্রের খবর, প্রথমে পাড়ে জমে থাকা আবর্জনা সরানোর দায়িত্ব কাদের, তা নিয়ে দু’পক্ষের মতবিরোধ হয়। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, তীরবর্তী এলাকা বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে। ফলে ঘাট ও ঘাট সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কারের দায়িত্ব কলকাতা পুরসভার হলেও গঙ্গাপাড়ের আবর্জনার দায়িত্ব বন্দরেরই। তা ছাড়া ওই এলাকাগুলিতে পুরসভার সাফাইকর্মীদের পক্ষে পৌঁছনোও সম্ভব নয়। যদিও বন্দরের তরফে তা অস্বীকার করে জানানো হয়, আবর্জনা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পুরসভারই।
আলোচনার মাধ্যমে পরে ঠিক হয়, যৌথ দায়িত্বে আবর্জনা সরানো হবে। তবে এই বিষয়ে সমাধানসূত্র মিললেও আর একটি বিষয়ের এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। তা হল— তীরে জমে থাকা আবর্জনা ব্যবস্থাপনার খরচ কে দেবে? ইতিমধ্যেই দুই পক্ষ নিজেদের বক্তব্য জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে জানিয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে বক্তব্য, গঙ্গাপাড়ে জমে থাকা আবর্জনা সরানোয় অবশ্যই পুরসভাকে পরিকাঠামোগত সাহায্য করা হবে। ক্রেনের মাধ্যমে বা অন্য পদ্ধতিতে আবর্জনা তোলা হবে নিয়মিত। তার পরে সেই আবর্জনা পুরসভা চিহ্নিত ঘাট সংলগ্ন এলাকায় ফেলা হবে। এ বার সেখান থেকে আবর্জনা সরানো ও তার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পুরসভার।
নবান্ন সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে এক বৈঠকে আবর্জনা বহনের খরচ ও তার ব্যবস্থাপনার খরচ দেওয়ার জন্য (রিইমবার্স) বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে সরকারের তরফে আবেদন জানানো হয়। যা সঙ্গে সঙ্গে খারিজ করে দেন বন্দরকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এই জঞ্জাল বন্দরের কর্মকাণ্ডের ফলে উৎপন্ন হচ্ছে না। ফলে এর খরচ দেওয়ার প্রশ্নই নেই। বন্দরের আইনজীবী পৃথ্বীশ বসু জানাচ্ছেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী যা করণীয়, বন্দর তা অবশ্যই করবে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে চলতে আবর্জনা সরানোর জন্য পুরসভাকে সহযোগিতাও করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু জঞ্জাল তো আসে পুরসভার দিক থেকে। তার বহন ও ব্যবস্থাপনার খরচ কেন বন্দর দেবে? নিয়ম তো সেটা বলছে না।’’
প্রসঙ্গত, কলকাতায় গঙ্গার ঘাটগুলির বিশেষত আহিরীটোলা, নিমতলা, সুতানুটি, কুমোরটুলি, কাশীপুর ও মায়ের ঘাটের দুরবস্থা নিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করেন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সুপ্রভা প্রসাদ। সংশ্লিষ্ট ঘাটগুলি কী ভাবে অপরিষ্কার, আবর্জনাময় হয়ে পড়ে থাকে, তা নিয়ে আদালতে সওয়াল করেন তাঁর আইনজীবী পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঘাটের অবস্থা সরেজমিন খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করে আদালত। সেখানেই ঘাট ও গঙ্গাপাড়ে জমে থাকা আবর্জনার প্রসঙ্গটি উঠে আসে।