রোহিত জয়সওয়াল।
ভোরে উঠে প্রাতর্ভ্রমণে যাওয়াই অভ্যাস বাবা-ছেলের। তবে সোমবার ছেলে রোহিত জয়সওয়াল ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলেন ভোর ৪টেয়। প্রাতর্ভ্রমণের জন্য ভোর ৪টে ২০ মিনিট নাগাদ চালতাবাগানের বাড়ি থেকে বেরিয়েও পড়েন তিনি। এর প্রায় আধ ঘণ্টা পরে বাড়ি থেকে বেরোন রোহিতের বাবা মুকেশ জয়সওয়াল। আর কিছু দূর যাওয়ার পরেই খবর পান, দুর্ঘটনায় পড়েছে তাঁর ছেলে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল রোহিতের। তার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিল পরিবার। এ দিনের দুর্ঘটনায় চুরমার হয়ে গিয়েছে পরিজনদের সেই স্বপ্ন। ছেলের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পায়ে হেঁটেই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুকেশবাবু। দুর্ঘটনার পরে সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বছর একত্রিশের রোহিতকে। আর সেখানে পৌঁছে মুকেশবাবু জানতে পারলেন, ছেলে আর নেই! এ দিন ভোরে বিবেকানন্দ রোডে বেপরোয়া লরির ধাক্কায় কংক্রিটের বাসের ছাউনি ভেঙে যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যেই এক জন রোহিত।
পেশায় ব্যবসায়ী মুকেশবাবুর তিন ছেলে। মেজো ছেলে রোহিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়িতে ছবি তুলতেন। কিন্তু তাঁর অকালমৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে তাঁর পরিবার। ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই ঘন ঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন তাঁর মা। আর কাঁদতে কাঁদতে ফোনে মুকেশবাবু বলছেন, ‘‘কোথা থেকে কী হয়ে গেল! কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। ভেবেছিলাম ছেলের বিয়েতে আনন্দ করব। ছেলেটাই যে এ ভাবে চলে যাবে, ভাবতে পারছি না।’’ যে বেপরোয়া লরিচালকের জন্য তাঁর ছেলে মারা গেল, তার কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মুকেশবাবু।
আরও পড়ুন: অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লোকাল চালানোর ভাবনা, টাইম টেবল প্রকাশ শীঘ্রই
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে স্কুল-কলেজ খোলার ভাবনা, রাজ্যে ছাড় মিলল বেশ কিছু ক্ষেত্রে
রোহিতের এই অকালমৃত্যু মানতে পারছেন না তাঁর প্রতিবেশীরাও। উৎসবের মরসুমে এমন খবরে শোকাচ্ছন্ন পাড়া। রোহিতের এক বাল্যবন্ধু বলছন, ‘‘এত ভাল ছবি তোলার হাত খুব কম দেখেছি। ও আমাদের পাড়ার সম্পদ ছিল।’’ আর তাঁর বাবা বলছেন, ‘‘দশ বছর বয়স থেকেই ওর ছবি তোলার ঝোঁক ছিল। যখনই ইচ্ছে হত, ক্যামেরা হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ত।’’