প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রের ফেম-২ (ফাস্টার অ্যাডপশন অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং অব ইলেকট্রিক অ্যান্ড হাইব্রিড ভেহিকল্স ইনইন্ডিয়া) প্রকল্পের আওতায় কলকাতায় ২০০০টি বৈদ্যুতিক বাস সরবরাহের বরাতের বড় অংশ পেল টাটা মোটরস। একমাত্র ১২ মিটার লম্বা, নিচু মেঝেযুক্ত ২৫০টি বাতানুকূল বাসের বরাত পেয়েছে অশোক লেল্যান্ড।
কেন্দ্রীয় শক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ সিইএসএল-এর (কনভারজেন্স এনার্জি সার্ভিসেস লিমিটেড) তত্ত্বাবধানে বেঙ্গালুরু, দিল্লি, সুরাত, হায়দরাবাদ এবং কলকাতা— এই পাঁচ শহরে মোট ৫৪৫০টি বৈদ্যুতিক বাস রাস্তায় নামানোর বরাত বুধবার নয়াদিল্লিতে চূড়ান্ত হয়েছে। কেন্দ্রের ফেম-২ প্রকল্পের আওতায় দূষণ কমানোর উদ্দেশ্যে ওপেক্স (অপারেশনাল এক্সপেন্ডিচার) বা গ্রস কস্ট মডেলে ওই সব বাস চালানো হবে। চুক্তি অনুযায়ী, বাসের দামের ৬০ শতাংশ টাকা তিন বছর ধরে ২০ শতাংশ হারে নির্মাণ সংস্থাকে দেবে কেন্দ্র। বদলে নির্মাণ সংস্থাকে বাস চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। বাস চলার জন্য রাজ্যকে কিলোমিটার পিছু একটি নির্দিষ্ট টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দিতে হবে। নির্মাণ সংস্থাকে আয়ের নিশ্চয়তা দেওয়া থাকছে প্রকল্পের শর্তের মধ্যে।
দীর্ঘদিন ধরেই ডিজ়েলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় এমন বাসের কথা একাধিক বার রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের গলায় শোনা গিয়েছে। কলকাতায় এখন ফেম-১ প্রকল্পের আওতায় এসে পৌঁছনো ৮০টি বাসের মধ্যে ৭৫টি বাস চলে। অন্য বাসগুলি পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় পর্যটনের কাজে ব্যবহারের রয়েছে। সেগুলি টাটা মোটরসের তৈরি। তবে ওই বাস কেনার খরচ কেন্দ্র এবং রাজ্য বহন করেছিল। নতুন ব্যবস্থায় সরাসরিবাস কেনার দায় সরকারি পরিবহণ নিগমের ঘাড়ে বর্তাবে না।
চুক্তি অনুযায়ী, রাজ্যের ভাগে যে চার ধরনের বাস পাওয়ার কথা রয়েছে, তার প্রথমে রয়েছে ১২ মিটার লম্বা, নিচু মেঝের ২৫০টি বাতানুকূল বাস। অশোক লেল্যান্ড ওই বাস সরবরাহ করবে এবং চালাবে। তার জন্য বাসপিছু প্রতি কিলোমিটারে ৪৭ টাকা ৪৯ পয়সা হিসেবে দৈনিক ২০০ কিলোমিটারের ভাড়া দিতে হবে। এর পরে রয়েছে ১২ মিটার লম্বা, স্বাভাবিক উচ্চতার মেঝের ৪৭৫টি নন-এসি বাস। টাটা মোটরসের ওই সব বাসের জন্য কিলোমিটার পিছু গুনতে হবে ৪৪ টাকা ৯৯ পয়সা ভাড়া। এর পরে রয়েছে ৯ মিটার লম্বা, স্বাভাবিক মেঝের ৫৭৫টি বাতানুকূল বাস। এ ক্ষেত্রে বাসপিছু প্রতি কিলোমিটারে গুনতে হবে ৪১ টাকা ৪৫ পয়সা। পরের ধাপে রয়েছে ৯ মিটার লম্বা, স্বাভাবিক মেঝের ৭০০টি নন-এসি বাস। এগুলির জন্য কিলোমিটার পিছু ৩৯ টাকা ২১ পয়সা করে দিতে হবে রাজ্যকে।
বাস রাস্তায় নামার পরে আগামী ১২ বছর অথবা ১০ লক্ষ কিলোমিটার চালানোর দায়িত্ব থাকবে বাস নির্মাণ সংস্থার। বাস চালিয়ে চুক্তির অধিক আয় হলে তা রাজ্য পরিবহণ নিগম পাবে। কম আয় হলে রাজ্যকে তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বাসের চালক দেবে নির্মাণ সংস্থা। তবে কন্ডাক্টর থাকবে রাজ্য সরকারের তরফে। বাস না চললে বা খারাপ থাকলে তার দায় বর্তাবে নির্মাণ সংস্থার উপরে। বৈদ্যুতিক বাসের চার্জিংয়ের পরিকাঠামো তৈরির জমি দেবে রাজ্য সরকার। পরিকাঠামো তৈরির দায়িত্ব নির্মাণ সংস্থার। ব্যাটারি চার্জ করার ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট সাড়ে ৫ টাকার বেশি যত লাগবে, তা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, জুলাই মাস থেকে সারা দেশে টাটা মোটরস বাস সরবরাহ শুরু করবে। দিল্লিতে বাসের বরাত দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত নীতি আয়োগ সূত্রের দাবি, সবচেয়ে কম দর হাঁকার নিরিখেই ওই বরাত দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইলেক্ট্রিক বাস এলে কলকাতার পরিবহণের চিত্রই বদলে যাবে।’’
তবে, ওই বাস দৈনিক ২০০ কিলোমিটার লাভজনক ভাবে চালানোর জন্য যথেষ্ট মাথা খাটিয়ে রুট বার করতে হচ্ছে বলে খবর। এর ফলে শহরতলির অনেক এলাকাকেও রুটের আওতায় আনার কথা ভাবা হচ্ছে। আপাতত ২০০০টি বাসের মধ্যে ১১৮০টি বাস আসবে বলে সূত্রের খবর।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পিএমআই ফোটন নামে একটি সংস্থার নিউ টাউনের ৬টি রুটের জন্য ৫০টি বাস দেওয়ার কথা। এই চুক্তি অবশ্য আগের। এ ক্ষেত্রে রাজ্যকে কিলোমিটার পিছু ৮৬ টাকা দিতে হবে।