ব্যক্তিগত মোটরবাইকে চেপে খাবার সরবরাহ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
জটিলতা যেন কাটছেই না! বছরের পর বছর প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই বদলাচ্ছে না। অভিযোগ, বাণিজ্যিক কাজে মোটরবাইক ব্যবহারের জন্য (কমার্শিয়াল ভেহিক্ল) লাইসেন্স মিলছে না। সেই সুযোগেই দেদার চলছে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘রেটিং’ বাড়ানোর ঝুঁকির বাইক-যাত্রা। পুজোর মুখে যাত্রী পরিবহণ, খাবার, আনাজ, মুদির সামগ্রী থেকে শুরু করে নানা জিনিস দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার তাড়নায় যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এ বার নম্বর একই রেখে সাদার বদলে হলুদ নম্বর প্লেট দেওয়া যায় কি না, সেই ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে পরিবহণ দফতরে। যা নজিরবিহীন বলে মনে করা হচ্ছে। এই কাজ আদৌ করা যায় কি না, সেই নিয়েই আপাতত জোর চর্চা চলছে নানা মহলে।
পরিবহণ দফতরের তরফে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই মোটরবাইকের বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল। মূলত দু’ধরনের পারমিট দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানানো হয়। একটি ক্ষেত্রে ১০০০ টাকার বিনিময়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য কোনও একটি জেলা এবং সেই সংলগ্ন আরও চারটি জেলা মিলিয়ে মোট পাঁচটি জায়গার পারমিট মিলবে। অন্য ক্ষেত্রে, ২০০০ টাকার বিনিময়ে পাঁচ বছরের জন্য পাওয়া যাবে এমন পারমিট, যা গোটা রাজ্যে প্রযোজ্য হবে। এর জন্য আরটিও অফিসে গিয়ে আবেদন করার খরচ বাবদ ১০০ টাকা এবং অন্যান্য কিছু খরচ মিলিয়ে দিতে হবে মোট ১৪০ টাকা। দিল্লির মতো শহরে যেখানে এমন বাইক নিয়ে কড়াকড়ি করা হয়েছে, সেখানে রাজ্যের ভূমিকা যথেষ্ট ইতিবাচক বলে প্রচার করা হয়েছিল সেই সময়ে। এর পরে বেলতলায় আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের (আরটিও) অফিসে শুরু হয় লাইসেন্সের জন্য নাম নথিভুক্তিকরণ। যদিও শুরুর দিন দুয়েকের মধ্যেই জটিলতা তৈরি হয় ঋণ নিয়ে কেনা মোটরবাইকের ক্ষেত্রে।
বাণিজ্যিক নম্বর প্লেট তৈরি হলে বাইকের নম্বর বদলে যাওয়ার কথা। কিন্তু নম্বর বদলের জন্য ঋণদানকারী সংস্থার এনওসি প্রয়োজন। কিন্তু ঋণদানকারী ব্যাঙ্কগুলি জানিয়ে দেয়, ঋণের টাকা না মেটা পর্যন্ত তাদের পক্ষে এনওসি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, গাড়ি বা বাইকের নম্বর ধরেই তারা হিসাব রাখে। ওই নম্বর তাদের কাছে গ্রাহকের অন্যতম পরিচয়। ঋণখেলাপির ক্ষেত্রেও পদক্ষেপ করা হয় এই নম্বর ধরেই। জটিলতা কাটাতে পরিবহণ দফতর থেকে সরাসরি ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু তাতেও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। এই জটিলতা কাটাতে পুজোর মুখে এ বার কী করণীয়, সেই নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
পরিবহণসচিব সৌমিত্র মোহন যদিও জানিয়েছেন, পুজোর আগেই জটিলতা কাটিয়ে ফেলতে বাণিজ্যিক কাজে বাইক ব্যবহার করে, এমন সব সংস্থাকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে কী করা যায়, সেই প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে।’’ সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে পরিবহণ দফতর ভাবছে, নম্বর একই রেখে সাদার বদলে হলুদ নম্বর প্লেট দিয়ে মোটরবাইক বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যায় কি না। যদিও আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের (আরটিও) কর্তারা জানাচ্ছেন, এমনটা করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। প্রথমত, ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরবাইকের নম্বরের ক্রমের সঙ্গে বাণিজ্যিক নম্বর-ক্রম মেলে না। ক্রম আলাদা হওয়ায় হিসাব রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবু কেউ এই পথে হাঁটতে চাইলে তাঁকে ‘রিটেনশন পলিসি’-র বেশ কিছু নিয়ম বাধ্যতামূলক ভাবে মানতে হয়। এ ক্ষেত্রে নথিভুক্তির জন্য প্রচুর খরচও পড়ে যায় বলে দাবি আরটিও আধিকারিকদের। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছেন, ‘‘তবে সরকার চাইলে এই সব সমস্যার সমাধান বার করাও যেতে পারে।’’
‘কলকাতা সাবার্বান বাইক-ট্যাক্সি অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি শান্তি ঘোষের দাবি, ‘‘প্রচুর মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের সুরাহা দিয়ে সরকারকে সমাধানসূত্র বার করতেই হবে।’’ পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী যদিও বলেন, ’’এই সরকার কোনও কড়া পদক্ষেপের পক্ষে নয়। মানবিক দিক থেকে অনেকটাই করা হয়েছে। আরও যা করা সম্ভব, পুজোর আগে সবটা করেও দেওয়া হবে।’’ তবে কি নম্বর এক রেখেই মিলবে আলাদা রঙের নম্বর প্লেট? এটা কি আদৌ হতে পারে? মন্ত্রী শুধু বলেছেন, ‘‘দ্রুত সবটাই জানিয়ে দেওয়া হবে।’’