রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়— ফাইল চিত্র।
শুভেন্দু-পর্বের মধ্যেই তৃণমূলের নতুন ‘অস্বস্তি’ হয়ে উঠলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দক্ষিণ কলকাতার একটি ‘অরাজনৈতিক’ কর্মসূচিতে গিয়ে, দল সম্পর্কে সোজাসাপ্টা উষ্মা প্রকাশ করে ফেললেন রাজীব। বললেন, ‘‘স্তাবকতা করতে পারলে নম্বর বেশি। ভালকে খারাপ, খারাপকে ভাল বলতে পারি না তাই আমার নম্বর কম। অন্যদের বেশি।’’ একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছাড়লে তা দলের পক্ষে বড় ক্ষতি। বললেন, ‘‘নেতাদের কেন এত ক্ষোভ-বিক্ষোভ তা নিয়ে অনুসন্ধান করাটা জরুরি।’’
শনিবার হরিদেবপুর এলাকায় একটি বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে যোগ দেন রাজীব। সেখানে দলের অন্দরে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের উত্থান’ নিয়েও সরব হন। রাজীবের কথায়, ‘‘যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তারা স্তাবক বলে সামনের সারিতে। যখন মানুষ ভাল কাজ করতে আসে, তখন পিছন থেকে টেনে ধরে।’’ মানুষ পছন্দ করে না এমন কিছু মুখ দলের নেতৃত্বে রয়েছে বলেও শনিবার অভিযোগ করেন রাজীব। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যারা ঠান্ডা ঘরে বসে থাকে তারাই এখন নেতৃত্বের সামনের সারিতে।’’
এই মুহূর্তে শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে প্রবল টানাপড়েন চলছে। রাজীব মনে করেন, ‘‘শুভেন্দু চলে গেলে বিশাল শূন্যতা তৈরি হবে।’’ ঘটনাচক্রে, শুক্রবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি, সাংসদ এবং বিধায়কদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘দল থেকে এক জন চলে গেলে এক লক্ষ সম্পদ তৈরি হবে।’’ তৃণমূল নেত্রী সরাসরি কারও নাম নেননি। তবে তাঁর মন্তব্যের মূল লক্ষ্য শুভেন্দু বলেই অনুমান রাজনীতি মহলের।
এর আগেও নাম না করে দলীয় নেতৃত্বের একাংশকে নিশানা করেছেন হাওড়ার তৃণমূল নেতা রাজীব। জুলাই মাসে বন দফতরের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘দলকে সত্যিই যদি দুর্নীতিমুক্ত করতে হয়, তা হলে সবাইকে ধরতে হবে। শুধু চুনোপুঁটিকে ধরলেই হবে না, রাঘব বোয়ালদের ধরতে হবে। তা না হলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে।’’ আমপান পরবর্তী ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন কমর্সূচিতে দুর্নীতির কথাও খোলাখুলি জানিয়েছিলেন তিনি। সে সময় রাজীবকে প্রকাশ্যে মুখ না খোলার ‘পরামর্শ’ দিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসক তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ শনিবার রাজীবের ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘‘ভাল ভাবে কাজ করছে আমাদের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘুরে ঘুরে কাজ করছে। রাজীব আমার ছোট ভাই।’’ পাশাপাশি, রাজীবের নাম না করে ববির মন্তব্য, ‘‘আসলে থাকতে থাকতে ডিপ্রেশন আসে। কোথাও কোনও শূন্যতা নেই। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের মাথার উপরে রয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: তৃণমূল বিধায়ক খুনের মামলায় মুকুল রায়কে চার্জশিট সিআইডি-র
তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, হাওড়ার জেলা রাজনীতিতে ‘রাজীব বিরোধী’ হিসেবে পরিচিত তৃণমূল নেতা তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অরূপ রায়কে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ মদত দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আপত্তি জানিয়েও সুরাহা না হওয়ায় মুখ খুলছেন রাজীব।
এক দিন আগে প্রায় রাজীবের সুরেই কথা বলতে শোনা গিয়েছিল কলকাতা পুরসভার বিদায়ী ডেপুটি মেয়র তথা প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষকে। শুক্রবার শুভেন্দুকে ‘জননেতা’ হিসেবে বর্ণনা করে অতীন বলেন, জনভিত্তি আছে এমন নেতার সংখ্যা তৃণমূলে কম, যাঁদের জনভিত্তি আছে শুভেন্দু তাঁদের অন্যতম। তিনিও বলেন, ‘‘শুভেন্দু দল ছাড়লে দলের ক্ষতি হবে।’’ পাশাপাশি, তৃণমূলের অন্দরের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে উত্তর কলকাতার তৃণমূল নেতা অতীনের কথা, ‘‘যাঁরা বিভিন্ন সময়ে দল এবং নেত্রীকে আক্রমণ করেছেন, তাঁদেরই অনেকে এখন দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা যারা পুরনো, তাদের এটা যন্ত্রণা দেয়।’’
আরও পড়ুন: নেত্রী মমতা বললেন, ‘অনেকে আমার মৃত্যু চায়’, শুনেই বৈঠকে কান্না বক্সির