হাওড়া এলাকায় এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছে দূষণের পরিমাণ।
দূষণের নিরিখে ধারাবাহিক ভাবে যে শহরের বাতাসের মান ‘খারাপ’, ‘খুব খারাপ’ এবং ‘বিপজ্জনক’ মাত্রার মধ্যে ঘোরাফেরা করে, গত কয়েক দিন ধরে সেই হাওড়ার দূষণ প্রায় উধাও। সৌজন্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ঘোষিত লকডাউন।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন ধরেই হাওড়ার বায়ুসূচক ‘সন্তোষজনক’, যা এ ক্ষেত্রে প্রায় অবিশ্বাস্য বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার হাওড়ার বায়ুসূচক ছিল যথাক্রমে ৭৩ এবং ১০০ (দু’টিই সন্তোষজনক)। তবে শুধু এই দু’দিন নয়। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বাতাসের মান আস্তে আস্তে ভাল হয়েছে।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যও বলছে, হাওড়ার বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম১০) পরিমাণ ক্রমশ কমছে এবং গত কয়েক দিনে তা ১০০ মাইক্রোগ্রামের (প্রতি ঘনমিটারে) মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। যেমন, বুধবার রাত ১১টায় বেলুড় মঠ এলাকায় পিএম-১০-এর পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৫৪.৯৩ মাইক্রোগ্রাম, যা নির্ধারিত মাত্রার (১০০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার) চেয়ে অনেকটাই কম। তথ্য বলছে, সাধারণত বছরের এই সময়ে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ২০০-৩০০ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। যেমন, গত বছরের ২৫ মার্চ রাত ১১টায় ঘুসুড়ি এলাকায় পিএম-১০-এর মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২২১.৩ মাইক্রোগ্রাম। আবার ২০১৬ সালের ২২ মার্চ একই সময়ে ঘুসুড়িতে সেই পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২৬৫.৪৪ মাইক্রোগ্রাম। পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘হাওড়ার মতো ঘিঞ্জি এলাকায় যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণ সামগ্রীর দূষণ-সহ একাধিক বিষয় বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। লকডাউনে দূষণের সেই উৎসগুলি কমে গিয়েছে বলে দূষণের পরিমাণও এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছে।’’
শুধু বাতাসের মানোন্নয়নই নয়। লকডাউনের জেরে হাওড়া শহরে এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে প্রতিদিনের আবর্জনা তৈরির পরিমাণও। হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, এর আগে প্রতিদিন প্রায় ৮৫০ টন বর্জ্য বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ফেলা হত। গত কয়েক দিনে সেই পরিমাণ কমে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০০ টনে। হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ জানিয়েছেন, শহরের কল-কারখানা, হোটেল, রেস্তরাঁ বন্ধ থাকায় এবং যানবাহন কম চলায় দূষণের পাশাপাশি আবর্জনার পরিমাণও কমে গিয়েছে।
বায়ুদূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হওয়া পরিবেশকর্মী, হাওড়ার বাসিন্দা সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘এই বিপর্যয়ের একটা ইতিবাচক দিক হল যে, দূষণের মাত্রা অনেকটাই কমেছে। না-হলে শুদ্ধ বাতাস কী, সেটা তো কয়েক বছর হল হাওড়াবাসী বুঝতেই পারেননি। এখন একটাই আশা, বিপর্যয় দ্রুত কেটে যাক। কিন্তু বাতাসের মানের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক।’’