—ফাইল ছবি
দুর্গাপুজোর পর থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় চলে যাত্রাপালার রমরমা। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এই বছরের ছবিটা সম্পূর্ণ অন্য রকম।
লকডাউনের পরিস্থিতিতে আর পাঁচটা ক্ষেত্রের মতো যাত্রা শিল্পেও শুরু হয়েছে ভাটার টান। আগেই বাতিল হয়েছিল চৈত্র-বৈশাখ মাসের শো। এ ছাড়া, রথের সময়ে যাত্রার মহরতের যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় বৈশাখ মাসের প্রথমেই, তা-ও করা যায়নি সে ভাবে। অদূর ভবিষ্যতে লকডাউন উঠলেও যাত্রাশিল্পী এবং সামগ্রিক ভাবে শিল্পের অবস্থা কী হবে, তা নিয়ে গভীর সংশয়ে রয়েছে যাত্রা সংগঠনগুলি।
পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা অ্যাকাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য তথা প্রযোজক কনক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘লকডাউনের ফলে যাত্রাশিল্পেও মন্দা দেখা দিয়েছে। গত দেড় মাসে শো করা যায়নি। আষাঢ় মাসে রথের আগে নতুন করে যাত্রার দল তৈরি করার কাজ শেষ হয়। সেই কাজও এ বার শুরু হয়নি। শো বাতিল হয়ে যাওয়ার ফলে প্রযোজক-সহ রাজ্যের সব ক’টি যাত্রা দলের বড় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ইতিমধ্যেই।’’
সূত্রের খবর, প্রতি বছর বৈশাখ মাসে যাত্রাশিল্পীদের নিয়ে দল তৈরি করা হয়। কোন শিল্পী কোন দলে সারা বছর কাজ করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এই সময়ে। রথের দিনে একটি অনুষ্ঠান করে বিভিন্ন যাত্রাদলের নাম এবং কারা কোন দলে যোগ দিলেন, তা ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়াও, ওই দিনেই বিভিন্ন যাত্রাপালার নামকরণ হয়। কনকবাবু জানান, কলকাতায় প্রায় ৫০টি যাত্রার দল রয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে ছোট-বড় আরও অনেক দল।
যাত্রাশিল্পীদের একটি সংগঠন, ‘সংগ্রামী যাত্রা প্রহরী’-র যুগ্ম সম্পাদক অনুভব দত্ত বলেন, ‘‘লকডাউনের ফলে বিভিন্ন যাত্রা দলের সামগ্রিক আর্থিক ক্ষতি তো হচ্ছেই। কিন্তু যে কলাকুশলীরা রোজ যাত্রাপালায় অভিনয় করে উপার্জন করেন, তাঁদের অবস্থা আরও করুণ। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে যাত্রাশিল্পকে বাঁচানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’
যাত্রা গবেষক উৎপল রায় বলেন, ‘‘চৈতন্য মহাপ্রভুর সময় থেকেই বাংলায় যাত্রার শুরু বলা যেতে পারে। ধীরে ধীরে তা সমাজে ও দর্শকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। গত সত্তরের দশক থেকে যাত্রাপালা পেশাদার হয়।’’ উৎপলবাবুর মতে, আগে মূলত ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে পালা হলেও বর্তমানে সামজিক কাহিনির চাহিদা বেশি।
পিয়ালি বসু নামে এক যাত্রা-অভিনেত্রী বলেন, ‘‘চৈত্র মাসের শেষে গ্রামবাংলায় প্রচুর যাত্রার শো হয়। এ বারও অনেক বুকিং ছিল। কিন্তু সবই মাঠে মারা গেল।’’ অভিনেত্রী পামেলা (চান্দ্রেয়ী ভৌমিক) বলেন, ‘‘করোনার জন্য অভিনেতা, প্রযোজক থেকে শুরু করে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলেই আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। চলতি বছরে যে ক্ষতি হচ্ছে তার প্রভাব পড়তে পারে আগামী বছরেও।’’