অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা এবং চালকদের এমন নিত্য টানাপড়েনে আখেরে ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের। প্রতীকী ছবি।
বাড়তি আয়ের জন্য একই চালক একাধিক ক্যাব সংস্থার অ্যাপ ডাউনলোড করে বিভিন্ন সময়েভাড়ার ওঠানামার দিকে লক্ষ রেখে সেখানে গাড়ি চালাচ্ছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী ট্রিপ গ্রহণ করছেন অথবা তা অন্য কাউকে দিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার যে সংস্থায় গাড়ি চালাচ্ছেন, সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কেটে নেওয়া কমিশন বাদ দিয়ে অল্প টাকা হাতে পাচ্ছেন। অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা এবং চালকদের এমন নিত্য টানাপড়েনে আখেরে ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের।
বহু ক্ষেত্রে যাত্রীরা পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ জানালেও সুরাহা মেলে না। আবার, প্রায়ই নানা ছুতোয় অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি চালকদের‘আইডি’ ব্লক করে দেয় বলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন যে, ভাড়া এবং প্রাপ্য কমিশনের হিসেব নেওয়া ছাড়া চালক এবং ক্যাবসংস্থার মধ্যে যোগাযোগের সুতো নেহাতই ক্ষীণ। এই অবস্থা কাটাতে এবং পারস্পরিক দায়িত্বের সীমারেখা নির্দিষ্ট করতে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির সঙ্গে চালকদের চুক্তি চায় রাজ্য সরকার।
উল্লেখ্য, ক্যাব সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই উপযুক্ত লাইসেন্সনেওয়ার পাশাপাশি কলকাতা শহরে তাদের অফিস থাকাবাধ্যতামূলক করেছে সরকার। তার কারণ, অফিস না থাকায় বিভিন্নক্ষেত্রে যাত্রী এবং চালকেরা নানাবিধ সমস্যায় পড়লেও সেগুলির সমাধান করার তৎপরতা সংশ্লিষ্ট সংস্থার দিক থেকে দেখা যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ।
নতুন ব্যবস্থায় অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা এবং চালকদের মধ্যে পারস্পরিক চুক্তি করা ছাড়াও চালকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ (ইনডাকশন প্রোগ্রাম) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাতে চালকেরা কোনও সংস্থায় গাড়ি চালানোর আগে সেটির সাধারণ নিয়মকানুন এবং বিধি সম্পর্কে যথাযথ ভাবে অবহিত হতে পারেন।
গত ৬ মে ক্যাব সংস্থা এবং চালক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী নিজে দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি থাকার বিষয়টির উপরে জোর দেন। ‘অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’, সিটু এবং এআইটিইউসি-র চালক সংগঠনের নেতৃত্ব দাবি জানান, যাত্রীর কাছ থেকে ট্রিপপিছু আদায় হওয়া ভাড়ার ৮০ শতাংশ যাতে চালক পান, তানিশ্চিত করা হোক। তাঁরা সংশ্লিষ্ট ক্যাব সংস্থার বিরুদ্ধে এই অভিযোগও আনেন যে, চালকদের আইডি ব্লক করে তাঁদের নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার করার অধিকার আটকে দেওয়া হচ্ছে। সমস্যা মেটাতে যাবতীয় অভিযোগ দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করে স্বচ্ছতার সঙ্গে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন পরিবহণমন্ত্রী। ভাড়া সংক্রান্ত বিবাদ এবং সরাসরি যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, বিশেষত মহিলা এবং বয়স্ক যাত্রীদের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের ঘটনা ঘটলে তা আলাদা করেনথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন তিনি। এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য সরকারকে দেওয়ার কথাও বলা হয়।
এর পাশাপাশি সিটু, ‘অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’ এবং এআইটিইউসি-র চালক সংগঠন একযোগে দাবি তোলে, চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানোর মতো ঘটনা না ঘটলে যেন তাঁদের আইডি ব্লক করা না হয়। পাশাপাশি, ক্যাবের বাতানুকূল যন্ত্র ঠিক রাখা-সহ অন্যান্য পরিষেবা যথাযথ রাখার দাবিও ওঠে।
প্রসঙ্গত, সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলিকে শৃঙ্খলায় বেঁধে সেগুলির পরিষেবা নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ দূর করার চেষ্টা চলছে। এই প্রসঙ্গে এআইটিইউসি-র অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘এই পরিষেবায় চলতে থাকা নৈরাজ্য একমাত্র সরকারি হস্তক্ষেপেই ঠেকানো সম্ভব। দেরিতে হলেও সরকারকে এ নিয়ে ভাবতে দেখে আমরা আশাবাদী।’’ যাত্রী পরিষেবার মানোন্নয়নে অ্যাপ-ক্যাবের ভাড়া নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বেঁধে দেওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছে চালক সংগঠনগুলি, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।