Dengue Fear

শীতের ভরসায় না থেকে ডেঙ্গি রোধে সচেতনতায় জোর

রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। গত বুধবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫২ হাজার। বুধবার গভীর রাতে এম আর বাঙুর হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:১৪
Share:

চলছে মশা তাড়ানোর প্রক্রিয়া। — ফাইল চিত্র।

রাজ্যে কোথাও কোথাও ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কমছে ঠিকই। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে তা কমতে শুরু করেছে, এমনটা এখনই বলা যাবে না। তাই কবে ঠান্ডা পড়বে, তার জন্য অপেক্ষা করে বসে না থেকে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজে জোর দিতে হবে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে সমস্ত জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ অন্যদের বৈঠকে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।

Advertisement

রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। গত বুধবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫২ হাজার। বুধবার গভীর রাতে এম আর বাঙুর হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরীর। তার নাম ভার্গবী মণ্ডল (১৪)। বাড়ি কলকাতা পুরসভার ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের যাদবগড়ে। মৃতার ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ রয়েছে। কলকাতা পুরসভা এলাকায় চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

যাদবপুরের একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ভার্গবী বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টিউশন ক্লাস থেকে বাড়ি ফেরার পরে ভার্গবীর জ্বর আসে। তার মাসি পিঙ্কি দাস বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে জ্বর আসার পরে ওকে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। শুক্রবার স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানো হয়। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। শনিবার রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। রবিবার সন্ধ্যায় এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শয্যা না থাকায় সেই রাতে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসি। অবস্থার অবনতি হলে সোমবার সকালে আবার এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়।’’ পিঙ্কি আরও জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে ভার্গবীর প্লেটলেট ২০ হাজারে নেমে যায়। বুধবার গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়।

Advertisement

অন্য দিকে, ওই দিনই সিএমআরআই হাসপাতালে মৃত্যু হয় উত্তরপাড়ার বাসিন্দা স্বপন ঘোষের (৫৩)। তাঁরও ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি হেমারেজিক শকের উল্লেখ রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়লে তবে ব্যবস্থা গ্রহণ নয়। বরং আগে থেকে এলাকার প্রতিটি জায়গায় ভাল মতো নজরদারি চালাতে হবে। যাতে মশার লার্ভা ধ্বংস করা যায়। সূত্রের খবর, রাজ্যের কয়েকটি জেলায় পতঙ্গবিদেরা ভাল ভাবে কাজ করছেন না বলে এ দিনের বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তাতে কয়েক জন পতঙ্গবিদ আপত্তিও জানান। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, প্রত্যেক পতঙ্গবিদের কাজকর্ম দৃশ্যমান হতে হবে। এলাকায় রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির আগেই সেখানে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে তাঁদের। যাতে পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব হয়। আবার স্থানীয় স্তরে যে সমস্ত আধিকারিক ওই পতঙ্গবিদদের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে বলে এ দিন জানিয়ে দেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষণ, শহরের পাশাপাশি মফস্‌সলেও বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। এক কর্তার কথায়, “শহরের মতো সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা মফস্‌সলে নেই। শহর লাগোয়া কোন কোন এলাকায় প্রকোপ বাড়ছে, তার তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। সেই তালিকা নগরোন্নয়ন দফতরকে দেওয়া হবে।”

আবার গত কয়েক বছরে যে সমস্ত ওয়ার্ড বা অঞ্চলে বেশি প্রকোপ দেখা গিয়েছিল, সেগুলির পাশাপাশি নতুন করে কোনও জায়গায় ডেঙ্গি বাড়ছে কি না, তা চিহ্নিত করারকথাও বলা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। যেমন, কলকাতা পুরসভা সূত্রেরখবর, ১০৫ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে চলতি বছরে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছরে সারা কলকাতায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ছ’হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে গত সপ্তাহ পর্যন্ত কেবল ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডেই ডেঙ্গিতে ১০৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ওই ওয়ার্ডে এখনও পর্যন্ত দু’জন ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজে ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে এলাকার মানুষকে সচেতন করেন। ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর অরিজিৎ দাসঠাকুরও। অরিজিতের অভিযোগ, ‘‘ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভার তরফে নিয়মিত বাড়ি বাড়ি ঘুরে সচেতন করা হচ্ছে। তবু বেশির ভাগ আবাসনের ভিতরে পুরকর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’’

পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পরিত্যক্ত বাড়ি, আবাসন থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বাড়ির তালা ভেঙে পুরকর্মীরা যাতে ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন, তার জন্য পুরসভা আইন প্রণয়ন করবে। শহরে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের জন্যই এই পরিকল্পনা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement