কলকাতার সেই ১০০ নম্বর ওয়ার্ড আবার শিরোনামে আসতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শততম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান ঘিরে। — ফাইল চিত্র।
নাকতলা এলাকায় কলকাতার ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের একটা ছোট কিন্তু উল্লেখযোগ্য ইতিহাস রয়েছে। ২০০৫ সালে রাজ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ ঘটে সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের। কলকাতার মেয়র পদপ্রার্থী করে সিপিএম বিকাশকে প্রার্থী করেছিল ওই ওয়ার্ডে। পাল্টা ‘ওজনদার’ প্রার্থী দিতে বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দাঁড় করায় তৃণমূল। হেরেছিলেন পার্থ। এর পরে পার্থ রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী হয়ে আপাতত নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে জেলবন্দি। অন্য দিকে, বিকাশ সেই বছরেই কলকাতার মেয়র হন এবং এখন বাংলা থেকে রাজ্যসভায় একমাত্র বাম সাংসদ।
কলকাতার সেই ১০০ নম্বর ওয়ার্ড আবার শিরোনামে আসতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শততম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান ঘিরে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ৩ অক্টোবর রেডিয়োয় ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন মোদী। কিছু দিন চলার পর প্রতি মাসের শেষ রবিবারকে ওই অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী রবিবার সেই ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্ব সম্প্রচারিত হবে। সেই দিন গোটা দেশে প্রতিটি বুথে মোদীর কথা সম্প্রচারের লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি। তবে বাংলার ক্ষেত্রে প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় কমপক্ষে ১০০টি বুথে আয়োজনের নির্দেশ রয়েছে।
সেই মতোই প্রস্তুতি চলছে বিজেপির দুই সাংগঠনিক জেলা কলকাতা উত্তর এবং কলকাতা দক্ষিণে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, টালিগঞ্জ বিধানসভার অন্যান্য বুথে মোদীর বক্তৃতা সম্প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে ‘উৎসবের চেহারা’ তৈরি করাই লক্ষ্য। এর পিছনে অবশ্য রাজনৈতিক কারণ তত নেই। মূলত মোদীর ১০০-র সঙ্গে মিলিয়ে ১০০ নম্বর ওয়ার্ড। তবে ঘটনাচক্রে, অধুনা নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পার্থ একদা ওই ওয়ার্ড থেকে ভোট লড়ে হেরে যাওয়ায় বিষয়টিতে খানিকটা রাজনীতির রং লেগে গিয়েছে।
বিজেপির কলকাতা দক্ষিণের জেলা সভানেত্রী সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা সাতটি বিধানসভা এলাকাতেই দলের নির্দেশ মতো কর্মসূচি নিয়েছি। তবে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে একটু বাড়তি উদ্যোগ রয়েছে। মোদীজির বক্তৃতা শুরুর আগেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। আমাদের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ উপস্থিত থাকতে পারেন।’’ সঙ্ঘমিত্রা জানিয়েছেন, দলের পতাকা ছাড়াও ওই ওয়ার্ডটি প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে সাজানো হবে। আবার ১২৫ নম্বর ওয়ার্ডে হবে রক্তদান শিবির। সেখানে রক্ত দেবেন ১০০ জন বিজেপি কর্মী।
একই রকম ‘১০০’ মিলিয়ে অনুষ্ঠান করতে চান বিজেপির কলকাতা উত্তরের নেতারাও। ১০০ জন ঢাকি নিয়ে অনুষ্ঠান করতে চান কলকাতা উত্তরের জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে বা অন্য কোথাও বড় করে অনুষ্ঠান হবে। স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে সর্বত্র ‘মন কি বাত’ সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে। অনেক জায়গায় বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে।’’
আবার বিজেপি নেত্রী বৈশালী ডালমিয়ার উদ্যোগেও রবিবার ‘মন কি বাত’ নিয়ে বিশেষ আয়োজন হচ্ছে তাঁর বাড়িতে। বীরেন রায় রোডে ‘ডালমিয়া হাউজ়’-এ তৈরি হচ্ছে একটি বড় নকল রেডিয়ো। তার ভিতর থেকেই ভেসে আসবে মোদীর গলা। বৈশালী চান, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ‘নব’ ঘুরিয়ে রেডিয়ো চালু করুন। কিন্তু দিলীপ বা সুকান্ত কলকাতার দুই অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন কি না, তা নিয়ে এখনও খানিকটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ, কেন্দ্রীয় বিজেপির নির্দেশ রয়েছে, বিশেষ কারণ ছাড়া সব সাংসদ এবং বিধায়ককে নিজের নিজের এলাকায় কাটাতে হবে আগামী রবিবার। মোদীর ‘সেঞ্চুরি’ উপলক্ষ করে সারা দিন ধরেই চলবে জনসংযোগ কর্মসূচি।