—প্রতীকী চিত্র।
গাড়ির ইঞ্জিনের প্রযুক্তিতে গত দেড় দশকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বড়সড় বদল আসার যুক্তিকে হাতিয়ার করে বাসের মেয়াদ ১৫ থেকে ২০ বছর করার দাবি শীর্ষ আদালতে জানাতে চলেছে রাজ্য সরকার। দ্রুত সেই আবেদন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি বেসরকারি বাসমালিক সংগঠন ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক বাসের মেয়াদ ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২০ বছর করার দাবি জানিয়ে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী এবং মুখ্য সচিবকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে জানানো হয়, বর্তমানে বৃহত্তর কলকাতা এলাকায় চলা বাসের বেশির ভাগই ভারত স্টেজ-৪ শ্রেণির। ২০২০ সালের মে মাস থেকে ওই রকম বাসের নথিভুক্তকরণ বন্ধ রেখে তার বদলে আরও উন্নত ভারত স্টেজ-৬ শ্রেণির বাস আনা হচ্ছে।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ে বৃহত্তর কলকাতা এবং দিল্লিতে ১৫ বছরের বেশি পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি চলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাসমালিক সংগঠনের যুক্তি, ওই রায় যে সময়ের, সেই সময়ে ইঞ্জিনের দূষণ কমানোর প্রযুক্তি বর্তমানের চেয়ে নিম্ন মানের ছিল। ভারত-১, ২ অথবা ৩ শ্রেণির ওই সব বাসের অস্তিত্ব এখন কলকাতায় নেই বলেই দাবি
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহার। তুলনায় অনেকটা আধুনিক স্টেজ-৪ বাসও ১৫ বছরের গেরোয় প্রায় বাতিল হওয়ার পথে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে এর জন্য শহরে প্রায় ১৫০০ বাস বাতিল হলে আকস্মিক ঘাটতি দেখা দেবে। এই অবস্থায় স্টেজ-৪ বাসগুলিকে আরও পাঁচ বছর চলতে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
সম্প্রতি ওই সংগঠনের সম্মেলনে পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, ১৫ বছরের বাস ২০ বছর চলতে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওই কাজ করা হচ্ছে। মামলায় রাজ্যের হয়ে সওয়াল করবেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি।
সোমবার পরিবহণ মন্ত্রী বলেন, ‘‘পরিবহণ শিল্পের হাল বিবেচনা করে সরকার ওই পদক্ষেপ করছে। বাসের মেয়াদ না বাড়লে বাসমালিকদের পক্ষে খরচ তোলা দুষ্কর হচ্ছে।’’ বহু রুটে সরকার নতুন পারমিট দিলেও বর্ধিত মূল্য দিয়ে নতুন বাস কেনার জন্য পারমিট নিতে
আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বহু মালিক। সব দিক ভেবেই মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানানো হচ্ছে।
বেসরকারি বাসমালিক সংগঠন ‘বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকেও মাসখানেক আগে চিঠি দিয়ে মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল। অতিমারি পর্বের দু’বছরে বাস অনিয়মিত চলার যুক্তি দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে। এর পাশাপাশি, একাধিক বাসমালিক সংগঠনের দাবি, বাসের দূষণের পরিমাণ ইঞ্জিনের বয়সের বদলে তার স্বাস্থ্যের উপরে নির্ভর করে। ফলে, বাসের স্বাস্থ্য যাচাই করা ছাড়াও উন্নত জ্বালানি ব্যবহার করে দূষণ সীমিত রাখা যায় কিনা, তা ভাবা জরুরি বলে দাবি তাঁদের।
এই প্রসঙ্গে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানিয়েছেন, জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায় এ ভাবে বদলানো যায় না। সরকার এ নিয়ে আদালতে গেলে অন্যান্য মামলার মতোই তাদের মুখ পুড়বে বলে দাবি তাঁর।