জলপ্রকল্প ঘুরে দেখছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। বুধবার, মায়ের ঘাটে। —নিজস্ব চিত্র
কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল ২০১০ সালেই। তিন বছরেও তা শেষ করা যায়নি। অবশেষে গঙ্গার অপরিশোধিত জল তোলার প্রক্রিয়া শুরু করল ধাপার জল পরিশোধন কেন্দ্র। তবে, তা একেবারে পুরভোটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। ডিসেম্বরে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন নির্ধারিত হলেও পুর-নির্বাচনে যে এর সুফল মিলবে, তা ঘুরেফিরে আসছে খাস পুরসভার অন্দরের আলোচনাতেও।
বুধবার কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে গঙ্গার জল তোলা শুরু হয় ওই প্রকল্পে। এই কাজের জন্য কাশীপুরে মায়ের ঘাটে ইতিমধ্যেই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন চারটি মোটর বসানো হয়েছে।
এ দিনই মেয়র জানিয়ে দেন, আগামী ২২ ডিসেম্বর পরিশোধনের কাজ শুরু করে ওই কেন্দ্রটি চালু হবে। তার পরেই বেলেঘাটা, মেট্রোপলিটন, আনন্দপুর, মুকুন্দপুর, তপসিয়া, তিলজলা, পাটুলি ও গড়িয়ার প্রায় ১৬টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা পরিস্রুত পানীয় জল পাবেন।
এখন কলকাতায় টালা-পলতার পরিস্রুত পানীয় জল পান উত্তর ও মধ্য কলকাতার বেশির ভাগ মানুষ। গার্ডেনরিচের জল পায় দক্ষিণের বেহালা, টালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া-সহ যাদবপুরের কিছু এলাকা। ওই দুই প্রকল্প থেকে প্রায় ২৮ কোটি গ্যালন জল আসা সত্ত্বেও বাইপাস এলাকায় গভীর নলকূপই ভরসা ছিল। সে কারণেই ধাপা প্রকল্প হাতে নেয় পুরসভা। ২০১০ সালে কাজ শুরু করার পরে মায়ের ঘাটে গঙ্গার ধারে জমি পাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। মেয়র জানিয়েছেন, কলকাতা পুর-বোর্ড তৃণমূলের দখলে আসার পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎপরতায় সেই জমিজট কেটে যায়। তার পরে ফের কাজ শুরু হয়।
পুরসভা সূত্রে খবর, তিন কোটি গ্যালন জলের এই প্রকল্পে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে যার ৩৫ শতাংশ দিয়েছে রাজ্য, ৩০ শতাংশ পুরসভা এবং বাকি ৩৫ শতাংশ কেন্দ্র। শোভনবাবু জানান, ধাপা প্রকল্প থেকে পরিস্রুত জল যাবে নতুন তৈরি হওয়া আনন্দপুর, মুকুন্দপুর ও পাটুলি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনে। এখন তপসিয়া-তিলজলার জন্য জি জে খান রোডেও একটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন হচ্ছে।
এ দিন মায়ের ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, গঙ্গা থেকে রেললাইনের নীচ দিয়ে পাইপলাইনে জল আনা হচ্ছে। আপাতত ওই জল টেনে পাইপের ভিতরকার মাটি-সহ নোংরা সাফাই চলছে বলে জানান জল সরবরাহ দফতরের ডিজি বিভাস মাইতি। এক আধিকারিক জানান, ডিসেম্বরে শেষ সপ্তাহে প্রথমে আনন্দপুরে জল পৌঁছবে। পরে মুকুন্দপুর, পাটুলি ও জি জে খান রোডে জল পাঠানো হবে। তিনি জানান, প্রায় ১৯৭ কিলোমিটার লম্বা পাইপলাইন পরিষ্কার হলে তবেই জল সরবরাহ শুরু হবে। ফলে দিন কয়েক সময় লাগবেই।
এ দিন মেয়র জানান, গার্ডেনরিচেও সাড়ে ছ’কোটি গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জল পরিশোধন কেন্দ্র প্রায় শেষ। সব মিলিয়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আরও ১০ কোটি গ্যালন বাড়তি জল পাবে শহরবাসী।