kali Puja 2022

ভাঙা রাস্তা আর দুর্যোগের আতঙ্কেই কি দিনভর অপেক্ষায় থাকল কালীঘাট

মন্দিরের সেবায়েতদের বক্তব্য, সাধারণ শনি-মঙ্গলবার কালীঘাটে দর্শনার্থীদের যেমন ভিড় হয়, সোমবার কালীপুজোর সকালে তেমন ভিড়ও ছিল না। বলতে গেলে দু’জন-চার জন করে দর্শনার্থী এসেছেন।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২৩
Share:

ভাটা: অন্যান্য বছরের তুলনায় দর্শনার্থীদের ভিড় কম ছিল কালীঘাটে। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

এক দিকে দুর্যোগের ঘনঘটা। অন্য দিকে, খন্দময় রাস্তা। অমাবস্যা তিথির যোগ-সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত তাই কি কালীঘাট মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভিড়ের টানে ভাটা ছিল?

Advertisement

সকাল থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি। মন্দিরমুখো ভিড় নেই। স্কাইওয়াক নির্মাণের জন্য মাস ছয়েক ধরে কালীঘাট মন্দিরে যাওয়ার মূল রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। সেই বড় বড় গর্তে ঝামা-পাথর ফেলে কালীপুজোর আগে গর্ত বোজানোর চেষ্টা হয়েছে। অবশ্য সমস্যা মেটেনি। রাস্তার দু’ধারে এখনও মাটি স্তূপ হয়ে পড়ে রয়েছে।‌

মন্দিরের সেবায়েতদের বক্তব্য, সাধারণ শনি-মঙ্গলবার কালীঘাটে দর্শনার্থীদের যেমন ভিড় হয়, সোমবার কালীপুজোর সকালে তেমন ভিড়ও ছিল না। বলতে গেলে দু’জন-চার জন করে দর্শনার্থী এসেছেন। কিন্তু এই সময়ের চেনা ভিড় উধাও। বিক্রি নেই। ফলে সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে সন্ধ্যা, গল্পগুজব করেই কাটিয়ে দিয়েছেন অধিকাংশ পাণ্ডা ও ডালার ব্যবসায়ীরা। সেই আড্ডায় ছিল, বছর পাঁচেক আগে পর্যন্ত বাংলা নববর্ষ ও কালীপুজোর ভিড়ের সুখস্মৃতি।

Advertisement

শেষ দু’বছর করোনার আতঙ্কে জারি হওয়া আদালত ও প্রশাসনের নানা বিধিনিষেধে বছরের ওই দু’দিন দর্শনার্থীদের ভিড় দেখিনি কালীঘাট মন্দির। যে কারণে ব্যবসায়ীদের প্রচুর লোকসান হয়েছিল। এ বছর দুর্গাপুজোয় দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছিল। তাই কালীপুজোয় ভিড়ের আশায় ছিলেন পাণ্ডা-সহ ডালা ব্যবসায়ীরা। তবে এ বার বিমুখ প্রকৃতিই। এ দিন সকাল থেকেই আকাশ ব্যাজার মুখ করে। সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া।

সেবায়েতদের আক্ষেপ, ‘‘সারা দিনে ছোট ছোট আকারে বিক্ষিপ্ত ভিড় হয়েছে। তবে দীর্ঘ লম্বা লাইন দেখাই যায়নি। যদিও আগামিকাল মঙ্গলবারেও অমাবস্যা তিথির যোগ থাকছে। তবে ছুটি নেই। তার উপরে আবহাওয়া ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। কাল মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভিড় করার আশা তাই নেই বললেই চলে।’’

ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য এ দিন সকাল থেকেই প্রস্তুত ছিল পুলিশ। সাতসকালেই লালবাজারের একাধিক পুলিশকর্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মন্দির চত্বর ও সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন। তবে কোনও ব্যস্ততা ছিল না। অধিকাংশ পুলিশকর্তাই নিজের গাড়িতে বসে কাটিয়ে দিলেন। বাহিনীর অফিসারদের কেউ আবার মন্দিরের আশপাশের দোকানের বেঞ্চে বসে গল্প করে বা মোবাইলে গেম খেলে কাটালেন।

দর্শনার্থী না থাকলেও জবার মালার দাম কিন্তু ছিল আকাশছোঁয়া। সকালে এক-একটি মালা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। সন্ধ্যার পরে তা হয়েছে ৭৫ থেকে ১০০ টাকা। বিক্রেতাদের দাবি, এখানেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাবা বসিয়েছে। তাই এই পরিস্থিতি। ভক্ত কম, তাই দিনভর প্রসাদের তেমন বিক্রিবাটা নেই। অধিকাংশ বিক্রেতা বলছেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেয়েই আশঙ্কা হয়েছিল যে এমন পরিস্থিতি হতে পারে। তাই কালীপুজো উপলক্ষে অতিরিক্ত প্রসাদ তৈরি করা নিয়েও সতর্ক ছিলাম। শনি-মঙ্গলবার যে পরিমাণ প্রসাদ তৈরি হয়, এ দিন তা-ই হয়েছিল।’’ ব্যবসায়ীদের মতে, করোনাকালে বৈশাখের প্রথম দিনে ও কালীপুজোয় ভিড়ের আশায় বেশি প্রসাদ তৈরি করে লোকসান হয়েছিল। সেই ক্ষতি থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার অতিরিক্ত প্রসাদ তৈরি হয়নি।

অধিকাংশ পাণ্ডাই নিজেদের বাঁধা-ধরা যজমান ছাড়া তেমন করে দর্শনার্থীর পুজো করেননি। এক পাণ্ডা বলছেন, ‘‘নানা তিথিতে বাঁধাধরা যজমান যাঁরা আসেন, তাঁরাই সারাদিন এসেছেন। তাঁরাই যা দক্ষিণা দিয়েছেন। সেটাই এই কালীপুজোয় প্রাপ্তি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement