ধর্মতলায় ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
আইন আছে কেবল খাতায়-কলমেই!
২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পর্ষদের তরফে এই বিধি মানতে প্রতিটি রাজ্যকে সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু দু’বছর পরেও খাস কলকাতাতেই ওই প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে রমরমিয়ে। নিয়ম মতো এই ধরনের নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার কথা কলকাতা পুরসভার পরিবেশ দফতরের। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় বিধি চালু হওয়ার পরে প্রথম দিকে পুর পরিবেশ দফতরের তরফে কয়েকটি বাজারে সচেতনতা অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে তার পরেও ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক বর্জনের ছবি চোখে পড়েনি। পুরসভার অবশ্য দাবি, এই ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহারে রাশ টানতে হলে আগে ওই প্লাস্টিক কারখানা বন্ধ করতে হবে। আর এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।
প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিকের প্রসঙ্গ টেনে বুধবার, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এক অনুষ্ঠানে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের ব্যবহার যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী দিনে মাটির স্তর প্লাস্টিকে ঢাকা পড়বে। জল মাটি ভেদ করে নীচে যাবে না। আমরা ভয়ানক বিপদের মুখে পড়ব।’’ প্লাস্টিকের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে সাধারণ
মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন ফিরহাদ। তবে, শুধু নাগরিক সচেতনতার দিকে তাকিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকলে হবে না বলেও মনে করেন তিনি। ফিরহাদের কথায়, ‘‘কম পুরু প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে পুলিশকে কাজে লাগানো হবে। এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে চলেছি।’’ এ দিন তিনি আবেদন করেন, শহরে কোথাও পুকুর ভরাট বা গাছ কাটতে দেখলেও যেন পুরসভার নজরে আনা হয়। পুর প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
বোঝাই: বুধবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসে গন্তব্যের পথে প্লাস্টিক ভর্তি গাড়ি। ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন বাজারে ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের রমরমা বর্তমানে চোখে পড়ার মতো। মাছ, আনাজ কেনার সময়ে বিক্রেতারা নির্দ্বিধায় ক্রেতার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন নিষিদ্ধ প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিক যে নিকাশি ব্যবস্থার পক্ষে ভয়ঙ্কর, তা নিয়ে বহু বার সতর্ক করেছেন পরিবেশকর্মীরা। পুর নিকাশি বিভাগ সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন রাস্তার ম্যানহোল থেকে প্রতিদিন প্রচুর প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত সামগ্রী তোলা হয়। নিকাশি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শুধু প্লাস্টিকই শহরের নিকাশি পথকে অবরুদ্ধ করে দিচ্ছে। সাধারণ নাগরিকেরা গালিপিটে প্লাস্টিক ফেলায় বৃষ্টির জল নামতে পারে না। ম্যানহোলে প্রচুর প্লাস্টিক পড়ে থাকায় নিকাশি নালা দিয়েও বৃষ্টির জল ও বর্জ্য জল সরে না।’’ পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকেরাও জানাচ্ছেন, শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার অন্যতম কারণ, অবাধে প্লাস্টিকের ব্যবহার।
৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এই সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় বিধি চালু হওয়ার পরে প্রথমে পুর পরিবেশ দফতর ঘোষণা করেছিল, নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার করলে বিক্রেতাদের ৫৫০ টাকা ও ক্রেতাদের ৫০ টাকা করে জরিমানা করা হবে। তবে দু’বছর পরেও পুর পরিবেশ দফতরের তরফে এই নিয়ম ভাঙার জন্য কোনও জরিমানা আদায় করা হয়নি। মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দারের সাফাই, ‘‘মানুষ সচেতন না হলে জরিমানা করে লাভ হবে না। ভোট মিটে যাওয়ায় এ বার বাজারে বাজারে পরিদর্শনে নামব।’’