ভর্তিতে বাড়তি চার দিন

সুরেন্দ্রনাথে তুলকালাম, হাজির পুলিশ কমিশনার

টাকা নিয়ে কলেজে ভর্তির হিড়িকে আতান্তরে পড়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। পুলিশি ধরপাকড়ের মধ্যেও চলছিল দাদাগিরি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০৬:৩৫
Share:

মোবাইলবন্দি: ভর্তি নিয়ে ঝামেলা অব্যাহত সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। সেখানে ঝোলানো বিজ্ঞপ্তির ছবি তুলছেন এক পুলিশকর্মী। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

আগে সময়সীমা ছিল ৬ জুলাই। অর্থাৎ কাল, শুক্রবার কলেজে ভর্তির পর্ব চুকে যাওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন কলেজ নির্বিঘ্নে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে বাড়তি চার দিন সময় দেওয়া হচ্ছে। বুধবার উচ্চশিক্ষা দফতর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ভর্তির সময়সীমা বাড়িয়ে ১০ জুলাই করা হয়েছে।

Advertisement

টাকা নিয়ে কলেজে ভর্তির হিড়িকে আতান্তরে পড়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। পুলিশি ধরপাকড়ের মধ্যেও চলছিল দাদাগিরি। এই অবস্থায় ভর্তি-সমস্যা মেটাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতর জানিয়ে দেয়, কাউন্সেলিং হবে ক্লাস শুরু হওয়ার পরে। ভর্তির টাকা দেওয়া যাবে অনলাইনে।

কিন্তু পড়ুয়ারা ভর্তি হবেন কী ভাবে? এর উত্তর খুঁজতে এ দিন বিভিন্ন কলেজের সামনে ভিড় করেন ছাত্রছাত্রীরা। বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায় সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। মণীন্দ্র, যোগমায়া ও আশুতোষ কলেজে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এ দিন সকালে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ পরিদর্শনে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অন্য এক পুলিশকর্তা জাভেদ শামিম।

Advertisement

উচ্চশিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তি দেখে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন অনেক পড়ুয়া। বিভ্রান্তি ছড়ায় অধ্যক্ষদের মধ্যেও। বিবেকানন্দ কলেজ ফর উইমেনের অধ্যক্ষা সোমা ভট্টাচার্য জানান, এই নতুন বিজ্ঞপ্তিতে কিছুটা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। কারণ এখন ভর্তি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেখানে নতুন করে ভর্তি নিতে গেলে এই নিয়মে করতে হবে। সেটা অসুবিধাজনক। এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে তাঁরা ভর্তির সামগ্রিক তথ্য কী ভাবে জানতে পারবেন, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে কলেজের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করেন পড়ুয়ারা। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ভিতরে ঢুকতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেন। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে রক্ষীদের ধস্তাধস্তিও হয়। আগে থেকেই সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। পরে আরও লাঠিধারী বাহিনী আনা হয়। বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বেরিয়ে এসে জানান, ভর্তির তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।

তনুময় দে নামে মধ্যমগ্রামের এক ছাত্র জানান, মেধা-তালিকায় নাম ওঠার পরে, ২৯ জুন কাউন্সেলিংয়ে ডাক পেয়ে তিনি কলেজে এসেছিলেন। কিন্তু কলেজের ‘দাদারা’ ভিতরে ঢুকতে দেননি। পরেও দু’বার এসে ফিরে যেতে হয়েছে। একই অভিজ্ঞতা শিবম ঘোষের। অনুষ্কা চক্রবর্তী নামে এক ছাত্রীর অভিযোগ, আশুতোষ কলেজে তিন দিন কাউন্সেলিংয়ের দিন ঘোষণা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দিনে কলেজে এলে কিছু ‘দাদা-দিদি’ ঢুকতে দেননি। বিদ্যাসাগর কলেজেও তাঁর কাছে টাকা চাওয়া হয়েছিল বলে জানান ওই ছাত্রী। মণীন্দ্র কলেজে একই ছবি। ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, স্নেহা সাহার মতো অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর উৎকণ্ঠিত প্রশ্ন, ‘‘আমরা কী করে ভর্তি হব?’’

সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীলবাবু জানান, মেধা-তালিকাভুক্ত যে-সব পড়ুয়া কাউন্সেলিংয়ের সময় বিভিন্ন কারণে কলেজে আসতে পারেননি, তাঁদের নিয়ে ফের একটি মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু পৃথক কোনও মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হবে না। কর্তৃপক্ষ পরোক্ষে স্বীকার করে নেন, পড়ুয়াদের আটকানোর অভিযোগ সত্যি হলেও হতে পারে। তাঁরা প্রশাসনকেও জানিয়েছিলেন। তাই মেধা-তালিকায় থাকা পড়ুয়াদের ফের সুযোগ দিতে চান কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ কমিশনার এ দিন হঠাৎ সুরেন্দ্রনাথে পরিদর্শনে হাজির হলেন কেন? সরাসরি জবাব এড়িয়ে কলেজ-কর্তৃপক্ষ জানান, সিপি শুধুই পরিদর্শন করেছেনন। কোনও রকম নির্দেশ দেননি। পুলিশের তরফ থেকেও বলা হয়, সিপি শুধুই পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন।

ভর্তি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবারেই সুরেন্দ্রনাথ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শেখ জসিমুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খোঁজ চলছে সেখানকার এক কর্মীরও। ফলে সিপি-র এ দিনের পরিদর্শনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এ দিন লালবাজারে জানানো হয়, ভর্তি সংক্রান্ত সব অভিযোগই খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement