ফাইল চিত্র।
সন্ত্রাসবাদী হামলায় আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারই শুধু ধূলিসাৎ হয়নি। সাময়িক ভাবে মাটিতে মিশে গিয়েছিল যাবতীয় আকাশচুম্বী বহুতলের স্বপ্নও। শনিবার ছিল ওই বিপর্যয়ের ২০ বছর।
সেই প্রসঙ্গ তুলে এ শহরের আবাসন নির্মাতাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, সমস্ত আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা। সে দেশে নির্মিত সর্বাধিক উঁচু দশটি বহুতলের আটটিই তৈরি হয়েছে ওই হামলার পরে। অথচ প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কলকাতায় আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন, প্রশ্নের মুখেই।
এমনিতেই এ শহর উচ্চতার দিক থেকে খর্বকায়। বিশ্বব্যাপী বহুতলের প্রামাণ্য তথ্য-ভাণ্ডার, বেসরকারি সংস্থা ‘কাউন্সিল অন টল বিল্ডিংস অ্যান্ড আর্বান হ্যাবিট্যাট’-এর (সিটিবিইউএইচ) রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫০ মিটার ও তার ঊর্ধ্বে বহুতলের সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের প্রথম ২০০টি শহরের মধ্যে কলকাতা ১০৪ নম্বরে। এমন পরিস্থিতিতে এ শহরের নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত একাংশের অভিযোগ, অতি সম্প্রতি পুরসভার ‘মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং কমিটি’ (এমবিসি) বড় প্রকল্পের নকশা অনুমোদন দিতে টালবাহানা করছে। আশঙ্কা, এতে সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ তৈরির (ইজ় অব ডুয়িং বিজ়নেস বা ইওডিবি) জন্য রাজ্য সরকারের চেষ্টা ধাক্কা খাবে।
প্রস্তাবিত নির্মাণ প্রকল্পের জমির মাপ ৫০০ বর্গমিটার এবং উচ্চতা ১৪.৫ মিটারের ঊর্ধ্বে-সহ একাধিক মাপকাঠি খতিয়ে দেখে এমবিসি এত দিন বড় বহুতলের নকশায় ছাড়পত্র দিয়ে এসেছে। তাতে সমস্যা হয়নি। সংশ্লিষ্ট এই কমিটিতে পুর প্রতিনিধি ছাড়াও দমকল, পুলিশ, পরিবেশ, স্থপতি, নগর পরিকল্পক-সহ একাধিক প্রতিনিধি রয়েছেন। হঠাৎই গত দেড়-দু’মাসে পরিস্থিতি এমন হয়েছে, অন্য দফতরের ছাড়পত্র থাকার পরেও নকশার অনুমোদন নিয়ে টালবাহানা করায় বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী ও এমবিসি-র দু’-এক জন সদস্যের মধ্যে। গত শুক্রবার এমবিসি-র বৈঠকে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
যার পরিপ্রেক্ষিতে এক নির্মাণ সংস্থার কর্তা বলছেন, ‘‘এক বারও বলছি না যে নকশায় ত্রুটি থাকতে পারে না। কিন্তু দমকল, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ-সহ একাধিক ছাড়পত্রের পরেও সেটা থাকলে, পুর বিল্ডিং দফতর আগেই জানাক। তা হলে সময় নষ্ট হয় না। কারণ, নকশা তো আগে তাদের কাছেই জমা পড়ে। সেখান থেকে নকশা প্রাথমিক অনুমোদন পেলে তবেই যায় এমবিসি-তে।’’ আবার এক বিনিয়োগকারীর বক্তব্য, ‘‘এমনটা চলতে থাকলে বড় আবাসন নির্মাতারা কলকাতায় বিনিয়োগের আগে ভাববেন!’’ যদিও পুর কমিশনার তথা এমবিসি-র চেয়ারম্যান বিনোদ কুমার বলছেন, ‘‘এ রকম কিছু হয়েছে বলে জানি না। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খোঁজ নেওয়া হবে।’’
এ দিকে, গত মঙ্গলবারই ইওডিবি-র প্রক্রিয়া মসৃণ করতে পুরসভা একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির সদস্য এবং আবাসন নির্মাতা সংস্থাগুলির সংগঠন, ‘ক্রেডাই বেঙ্গল’-এর চেয়ারম্যান নন্দু বেলানি বলছেন, ‘‘বড় প্রকল্পের নকশা অনুমোদনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কারণ, এর সঙ্গে শহরের বিনিয়োগবান্ধব ভাবমূর্তি জড়িত।’’
২০ বছর আগের এক ১১ সেপ্টেম্বরে ধূলিসাৎ হওয়ার পরেও ফের মাটি থেকে উঠে আকাশ ছুঁয়েছে নিউ ইয়র্ক। নিউ ইয়র্কের মতো সম্ভব নয় ঠিকই। কিন্তু সাম্প্রতিক জটিলতা কাটিয়ে নিজের মতো করে কি ফের আকাশপানে চাইতে পারে না এ শহর?— আকাশই হয়তো জানে সে উত্তর!