মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের দুর্গাপুজার উদ্বোধনে আসতে পারেন অমিত শাহ। — ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে আয়োজিত দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্য বিজেপি সূত্রে এমনটাই খবর। পুজোর কয়েক মাস পরেই দেশে লোকসভা ভোটের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। তার আগে বাঙালির ‘সেরা’ পার্বণটিকে প্রত্যাশিত ভাবেই জনসংযোগের কাজে ব্যবহার করতে চান শাহ।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ২০১৯ সালের চেয়েও ভাল ফল করতে মরিয়া বিজেপি নেতৃত্ব। আসনের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, ওই সংক্রান্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলের। সেই আলোচনার পরেই গত সোমবার রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বনসল। সেখানে বিধানসভা এলাকাভিত্তিক দুর্গাপুজোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যাতে প্রতিটি বিধানসভায় অন্ততপক্ষে একটি করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা যায়। পাশাপাশি, বিজেপির মণ্ডলভিত্তিক ছোট ছোট ক্লাব সংগঠনগুলির দুর্গাপুজোয় দলের নেতা-কর্মীদের যুক্ত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ওই সব পুজোয় দলের তরফে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই বনসল নেতাদের জানিয়েছেন, ভবানীপুরে পুজোর উদ্বোধনে আসতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাই ভবানীপুর এলাকায় দুর্গাপুজোর আয়োজনের জন্য দলকে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হতে হবে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ এর আগেও কলকাতায় দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে সামিল হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর তিনি বিধাননগরে একটি পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন।
তবে এ বার শাহের ঔৎসুক্যের কারণে মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভরানীপুর এলাকার মধ্যে একটি দুর্গাপুজোর আয়োজন করতে বলা হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বকে। কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র অন্যতম শরিক তৃণমূল নেত্রী মমতা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে মমতার বিধানসভা কেন্দ্রে সেই পুজোর উদ্বোধনে আসতে চেয়েছেন। পুজোর অন্য দিনগুলিতেও যাতে অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা আসেন, সেই ব্যবস্থাও করা হবে বলে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, মাস তিনেক আগে ভবানীপুরে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে এক ঘরোয়া বৈঠকে দুর্গাপূজা আয়োজনের কথা বলে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেইমতো প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিলেন ভবানীপুরের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোট এসে পড়ায় শুভেন্দুর ব্যস্ততার কারণে সেই প্রস্তুতি খানিক থমকে গিয়েছিল। সম্প্রতি বিধানসভার অধিবেশনের অবসরে এক প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলনেতা জানিয়েছিলেন, শুধু ভবানীপুর নয়, রাজ্য জুড়ে শারদোৎসবের সময় মহালয়ার দিন থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত বিজেপি কর্মীরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করবেন। কোথাও সংগঠনগত ভাবে পুজো করা হবে, কোথাও স্থানীয় পুজোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিজেপির নেতা-কর্মীরা উৎসবের মঞ্চকে জনসংযোগের পথ হিসেবে ব্যবহার করবেন।
পুজোর ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের তরফে কোনও ‘সহযোগিতা’ পাওয়া যাবে না বলেই ধরে নিচ্ছে বিজেপি। তাই তারা নিজেদের মতো করে পুজোর বন্দোবস্ত করছে। ভবানীপুর বিধানসভার অন্তর্গত তিনটি কেন্দ্রীয় সরকারি জায়গাকে নিজেদের পুজোর স্থল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন বিজেপি নেতারা। নিজাম প্যালেস, জাতীয় গ্রন্থাগার এবং রবীন্দ্রসদন মেট্রো স্টেশনের লাগোয়া কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের অতিথিশালাকে পুজোর জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছিল তারা। কিন্তু পরে আলোচনায় দেখা যায়, জাতীয় গ্রন্থাগার বা নিজাম প্যালেসের পুজো হলে তা ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে রেখাপাত করবে না। নিজাম প্যালেস বা জাতীয় গ্রন্থাগারে পুজো হলে তাতে বারোয়ারি অংশগ্রহণ কঠিন হবে। জনসমক্ষে দেখাও যাবে না। তাই কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের অতিথিশালাকেই প্রাথমিক ভাবে পুজোর স্থল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলেই সেখানে শুরু হবে পুজোর যাবতীয় উদ্যোগী।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সাল থেকে সল্টলেকের ইজেডসিসি-তে দুর্গাপুজার আয়োজন শুরু করে রাজ্য বিজেপি। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর ২০২২ সালে পুজোর পর ওই পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বার বিধানসভা ভিত্তিক পুজোর আয়োজন করতে চায় বিজেপি।