গেরো: নিউ মার্কেটের সামনে সেই পার্কিং লট। নিজস্ব চিত্র
এক বছরেরও বেশি ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে নিউ মার্কেটের পার্কোম্যাট। তার ফল ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। কবে যে তা খুলবে, জানা নেই কারও।
গত পুজোয়, বড়দিনের পরে এ বারের ইদেও গাড়ি রাখার জায়গা না পেয়ে অনেক ক্রেতাই নিউ মার্কেটের দিকে যাননি বলে ব্যবসায়ীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে চিঠিচাপাটিও কম হয়নি। কিন্তু সমস্যা সমাধানের উপায় এখনও দেখা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি যা, তাতে পুজোর আগে পার্কোম্যাট চালু হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা।
নিউ মার্কেট এলাকার পার্কিং সমস্যা মেটাতে বছর দশেক আগে ভূগর্ভস্থ এই পার্কিং চালু হয়েছিল। পুরসভার হিসেব মতো ওই পার্কিং লটে ২৭০টি গাড়ি রাখা যায়। কিন্তু প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই পার্কিং বন্ধ। নিউ মার্কেটের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় গাড়ি রাখার পার্কোম্যাট তৈরি করিয়েছিলেন কলকাতার তৎকালীন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এর জন্য একটি বেসরকারি নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে পুরসভা চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী, সারা বছরে পার্কিং থেকে মোট আয়ের পাঁচ শতাংশ টাকা পুরসভা রাজস্ব হিসেবে পাবে। গত দশ বছর ধরে সব ঠিকঠাক চললেও বিপত্তি বাধে গত বছরের মার্চে। কিছু দিন টানাপড়েনের পরে বন্ধ হয়ে যায় ওই পার্কিং এলাকা।
কলকাতার বর্তমান মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিউ মার্কেটে ভূগর্ভস্থ ওই পার্কিং এলাকায় অগ্নি নিরাপত্তার নিয়মকানুন মানা হয়নি। এ ছাড়াও, পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির থেকে অনেক বকেয়া রয়েছে। তাই পার্কিং বন্ধ রাখা হয়েছে।’’
যদিও নির্মাণকারী সংস্থার দাবি, তাদের কাছে পুরসভার কোনও বকেয়া নেই। সংস্থার আরও দাবি, ‘‘ভূগর্ভস্থ পার্কিং এলাকায় অগ্নি সুরক্ষার জন্য বাড়তি ব্যবস্থা রাখতে দমকলের তরফে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা কার্যকর করা কঠিন।’’
দমকলের সুপারিশ, বিপদ ঠেকাতে বাইরে ধোঁয়া বার করতে মাটির তলায় একটি অতিরিক্ত চিমনি তৈরি করতে হবে। নির্মাণকারী সংস্থার এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘এই মুহূর্তে ওই চিমনি তৈরি করা অসম্ভব।’’
বছর দশেক আগে মাটির নীচে অত্যাধুনিক মানের গাড়ি পার্কিংয়ের এই জায়গা-সহ প্রায় দুশোটি দোকানও তৈরি হয়েছিল। সিমপার্ক মল শপ ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক আফরোজ আহমেদ খান বলেন, ‘‘হকার দিন দিন বাড়ছে। গাড়ি রাখার জায়গা নেই। ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থা থাকায় অনেকে গাড়ি নিয়ে বাজার করতে আসতেন। গত এক বছরে একটি বিশেষ শ্রেণির ক্রেতাও
কমে গিয়েছে।’’
নিউ মার্কেট জয়েন্ট ট্রেডার্স ফেডারেশনের সম্পাদক অশোক গুপ্ত বলেন, ‘‘গাড়ি নিয়ে এলেও রাস্তার পাশে গা়ড়ি রাখার জায়গা নেই। এ রকম অবস্থায় মাটির নীচে গাড়ি রাখা বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষকে চরম সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।’’
যাঁর আমলে নিউ মার্কেটে ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, সেই তদানীন্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ রকম জনবহুল এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং ছাড়া গাড়ি রাখার কোনও জায়গাই নেই। নিউ মার্কেটের মতো জায়গায় দীর্ঘ দিন ধরে এই পার্কিং বন্ধ থাকা
দুর্ভাগ্যের বিষয়।’’
তবে বর্তমান মেয়র সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দমকলের সুপারিশ না মানলে কোনও ভাবেই ওই ভূগর্ভস্থ পার্কিং অঞ্চল চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে না।