একাধিকবার অভব্যতার অভিযোগ উঠেছে উবর চালকদের বিরুদ্ধে। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
৮ মার্চ, ২০১৮
হরিয়ানায় অ্যাপ-ক্যাবে চালকের হাতে অফিসফেরত তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ। নিজেকে বাঁচাতে ধীর গতিতে চলা গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিতে বাধ্য হন ওই তরুণী।
২৯ জুন, ২০১৮
সল্টলেক থেকে দক্ষিণ কলকাতা যাওয়ার পথে অ্যাপ ক্যাব চালকের বিরুদ্ধে তরুণী যাত্রীকে নিগ্রহ ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ।
৩০ অগস্ট, ২০১৮
যাদবপুর এলাকা থেকে অ্যাপ ক্যাব নিয়েছিলেন এক কলেজছাত্রী। অভিযোগ, চালকের হাতে নিগৃহীতা হন তিনি।
এটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। দেশের বিভিন্ন শহরে উবর-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুরি ভুরি। অভিযোগ, অনেক সময়েই পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে চালকের অভব্যতার শিকার হতে হয় যাত্রীদের। এছাড়া গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই মাঝপথে নামিয়ে দেওয়া, রুট পছন্দ না হলে ট্রিপ বাতিল করে দেওয়ার মতো ঘটনা তো আকছার ঘটে।
এই ধরনের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে এবং নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে উদ্যোগী এই নামী অ্যাপক্যাব পরিষেবা সংস্থা। চালকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করল তারা। এই প্রশিক্ষণে ছিল যাত্রীদের সঙ্গে কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, তার পাঠ। ওয়ার্কশপে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় লিঙ্গ বৈষম্যের সমস্যার উপরে। বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে চালকদের বোঝানো হয়, পুরুষ ও মহিলা যাত্রীদের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। তাই, যে কোনও চালককে তাঁর গাড়ির যাত্রীকে দেখতে হবে যাত্রী হিসেবেই। নারী বা পুরুষ হিসেবে নয়।
শুধু মুখের বুলি নয়। উদাহরণ তুলে আনা হয় ঘরোয়া স্তর থেকে। চালকদেরই প্রশ্ন করা হয়, বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার সময় কী কী জিনিস কেনেন? উত্তর আসে, ছেলে হলে ফুটবল বা ব্যাডমিন্টন খেলার জিনিস। মেয়ে হলে পুতুল আর খেলনাবাটি। এই গোড়াতেই লুকিয়ে গলদ। কারণ আমরা প্রথম থেকেই বৈষম্য এনে ফেলি বাচ্চাদের বড় করার ক্ষেত্রে। বোঝানো হল, কর্মশালায়।
মহিলা যাত্রীদের আরও ভাল পরিষেবা দিতেই এই কর্মশালার উদ্যোগ। দাবি উবর-এর। (ছবি: সংগৃহীত)
এরপর চালকদের থেকেই ভেসে এল পাল্টা বক্তব্য। বাড়িতে রান্নার কাজ মেয়েদের জন্য নির্ধারিত হলেও বড় হোটেলের নামী শেফ হন পুরুষরাই। তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন কর্মশালায়। সেখানে উঠে আসে যাত্রীদের তরফে অযথা বায়নাক্কার অভিযোগও।
এই ধরনের বায়নাক্কা আসে পুরুষ ও মহিলা নির্বিশেষে, সবরকম যাত্রীর কাছ থেকেই। অভিযোগ উবরচালক সঞ্জয় পোদ্দারের। চার বছর হয়ে গেল তিনি উবর-এর হয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন কলকাতায়। গাড়িতে কোনওমতেই যাত্রীদের ধূমপান করতে দেন না তিনি। এ বিষয়ে তিনি খুবই কড়া। জানালেন সঞ্জয়। আবার, বেশি রাতে কোনও মহিলা যাত্রী একা গন্তব্যে পৌঁছলে তিনি অপেক্ষা করেন। গাড়ি থেকে নামার পরে যতক্ষণ না ওই মহিলা নিরাপদে বাড়িতে ঢুকছেন, ততক্ষণ গাড়ি নিয়ে থাকার চেষ্টা করেন সঞ্জয়। একই কথা বিশাল সাউয়েরও। তিনি কয়েক মাস হল উবর-এর হয়ে কাজ করতে শুরু করেছেন। বয়সে তরুণ বিশালের আবার নেশায় অসংলগ্ন যাত্রীকে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার মতে চ্যালেঞ্জও নিতে হয়েছে।
তবে কর্মশালায় হাজির সব বয়সের চালক এক কথায় স্বীকার করলেন, রাতের কলকাতায় মেয়েরা আগের থেকে অনেক বেশি একা একা অ্যাপক্যাবে সওয়ার হন। কখনও তাঁর গন্তব্য অফিস। কখনও হয়তো তিনি যাচ্ছেন বিমানবন্দর। আবার অনেক সময়েই হয়তো অসুস্থ পরিজনকে দেখে ফিরছেন নিজের বাড়ি।
উবর কর্তৃপক্ষও জানাচ্ছেন, তাঁরা চান মহিলারা আরও বেশি করে অ্যাপক্যাবে স্বচ্ছন্দ বোধ করুন। তাঁদের যেন সেখানে যৌন হেনস্থার কবলে পড়তে না হয়। তা হলে তো সাধারণ জনপরিবহণের সঙ্গে অ্যাপ ক্যাবের পার্থক্য থাকবে না। মহিলা যাত্রীদের আরও ভাল পরিষেবা দিতেই এই কর্মশালার উদ্যোগ। দাবি উবর-এর।
আরও পড়ুন: পুজোয় বৃষ্টিভাগ্য কেমন? তাকিয়ে শহরবাসী
আরও পড়ুন: ‘মগজাস্ত্র’ কি খোয়া গিয়েছে, প্রশ্নে পুলিশ