অপরিসর: দু’টি বাড়ির মাঝখানে এই সরু গলিতে পড়ে গিয়েই মৃত্যু হয় মিঠুন দাসের (ইনসেটে)। বুধবার, তিলজলায়। নিজস্ব চিত্র
সরু গলির মধ্যে প্রায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে দু’টি পাঁচতলা বাড়ি। তারই একটি থেকে একসঙ্গে নীচে পড়লেন দুই যুবক। সেই সঙ্গেই ভেঙে নীচে পড়ল একাধিক জানলার সানশেড এবং ফুলের টব! দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁদের এক জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। অপর জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিলজলায় মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনায় রহস্য কাটেনি বুধবারও। মৃতের পরিবারের দাবি, যিনি বেঁচে গিয়েছেন, তিনিই তাঁদের ছেলেকে উপর থেকে ফেলে দিয়ে খুন করেছেন। সেই সঙ্গে অসাবধানতার কারণে নিজেও পড়ে গিয়েছেন। কিন্তু এই দাবির সত্যতা এখনও যাচাই করে উঠতে পারেনি পুলিশ। উল্টে অন্য একটি সূত্র থেকে পুলিশ জেনেছে, মত্ত অবস্থায় এক ছাদ থেকে অপর ছাদে লাফ দেওয়ার প্রতিযোগিতা করতে গিয়েই এই ঘটনা!
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত যুবকের নাম মিঠুন দাস। তিনি একটি জুতোর কারখানায় কাজ করতেন। তিলজলা রোডে তাড়িখানা মোড়ের কাছে তাঁর বাড়ি। মা, দুই দাদা এবং তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ওই বাড়িতে থাকতেন মিঠুন। বাড়িটির একই তলায় থাকেন পাপ্পু রাম নামে বছর ২৮-এর অপর যুবক। তাঁর স্ত্রী এবং তিন সন্তান রয়েছে। পাপ্পু ঘর রং করার কাজ করেন।
দুই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সকাল থেকে তাঁরা মদ্যপান করছিলেন। সন্ধ্যায় দু’জনে ছাদে যান। সেখানেও শুরু হয় মদ্যপান। এর পরে দু’জনেই রাতে ছাদে শুয়ে পড়বেন বলে ঠিক করেন।
দুই পরিবারেরই দাবি, এর পরে কোনও কারণে মিঠুন এবং পাপ্পুর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। পরিবারের লোকজন গিয়ে তাঁদের বুঝিয়ে শান্ত করে আসেন এক বার। এর খানিক পরেই উপর থেকে নীচে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পান প্রতিবেশীরা। তাঁরা বেরিয়ে দেখেন, পাপ্পু ও মিঠুন বাড়ির পিছনের দিকের একটি গলিতে পড়ে রয়েছেন। দ্রুত দু’জনকেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মিঠুনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পাপ্পুর কোমরে আঘাত লাগলেও শরীরে অন্য অংশে তেমন কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তিলজলা থানার তরফে ওই বাড়িটির সামনে পুলিশি প্রহরা বসানো হয়েছে। ওই বাড়ি এবং তার পাশের বাড়িটির মাঝখানে রয়েছে সরু গলিটি, যেখান থেকে দু’জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এ দিন দুপুরেও সেখানে দেখা গেল রক্তের দাগ। বাড়ির ছাদে উঠে দেখা যায়, আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে মদের বোতল। তার মধ্যেই দু’জনের শোয়ার জায়গা করা। ওই ছাদ থেকে পাশের বাড়ির ছাদটির দূরত্ব মাত্র এক হাত।
ছাদের যে অংশ থেকে দু’জনে পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন, সেই জায়গাটি দেখিয়ে মিঠুনের মা চাঁদমুনি দাস বলেন, ‘‘আমার ছেলে রাগ করে ঘরে চলে এসেছিল। পাপ্পু ওকে ফের ডেকে নিয়ে যায়। পরিকল্পনা করে ওকে এখান থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’’ পাপ্পুর স্ত্রী পিঙ্কির পাল্টা দাবি, ‘‘দু’জনেই ভাল বন্ধু। কাউকে ঠেলে ফেলা হলে যে ঠেলা দিচ্ছে, সে কি নিজেও পড়ে যেতে পারে?’’
কিন্তু পুলিশের যে দাবি, মত্ত অবস্থায় এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে লাফ দেওয়ার প্রতিযোগিতা করতে গিয়েই এই কাণ্ড! চাঁদমুনির দাবি, ‘‘এখানে ছাদ টপকে এ বাড়ি-ও বাড়ি যাওয়া-আসা চলতে থাকে। কিন্তু কোনও দিনই এমন কিছু ঘটেনি। সত্যি ধামাচাপা দিতে এই সব কথা বলা হচ্ছে।’’ পুলিশ আপাতত মৃতদেহের ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে আসার অপেক্ষা করছে।