মৃত: ছটপুজোর পরেই ভেসে উঠল মাছ ও কচ্ছপ। সোমবার, রবীন্দ্র সরোবরে। নিজস্ব চিত্র
সরোবরের ধারেই ঝোপের মধ্যে আটকে রয়েছে একটি কচ্ছপ। জীবিত ভেবেই প্রাতর্ভ্রমণকারীদের কয়েক জন কচ্ছপটির দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখেন সেটি নড়াচড়া করছে না। তার পরেই তাঁরা বুঝতে পারেন কচ্ছপটি মৃত। আরও একটু এগিয়ে তাঁরা আবার দেখতে পান জলে ভাসছে দু’টি মরা মাছ।
ছটপুজোর পরেই রবীন্দ্র সরোবরে সোমবার এ ভাবেই ভেসে উঠল মরা মাছ ও কচ্ছপ।
ছটপুজোর জেরে জলের মান যে খারাপ হয়েছে, তা আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন পরিবেশবিদদের একটি বড় অংশ। এ বার মাছ ও কচ্ছপ মারা যাওয়ায় সেই আশঙ্কা আরও দৃঢ় হচ্ছে। যদিও কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-র দাবি, জল দূষিত হলে শুধু দু’টি মাছ বা একটি কচ্ছপ মরত না, আরও বেশি সংখ্যায় মাছ বা জলজ প্রাণী মারা যেত।
পরিবেশবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, দু’দিন ধরে যে ভাবে সরোবরের জলে বিভিন্ন পুজোর উপকরণ জমা হয়েছে, তাতে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখন দ্রবীভূত অক্সিজেন কমার অর্থই হল জলে জৈব অক্সিজেনের চাহিদা (বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) বেড়ে যাওয়া। জলজ প্রাণীর মৃত্যুর যা অন্যতম কারণ।
এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘পুজোর উপকরণগুলি জলে পড়ার ফলে জলের উপরিভাগে একটি স্তর তৈরি হতে পারে। যা ভেদ করে সূর্যরশ্মি জলের গভীরে প্রবেশ করতে পারেনি। এর ফলে জলে থাকা শ্যাওলা, যা অক্সিজেন সরবরাহ করে জলে, তারা সক্রিয় হতে পারেনি। তার ফলে অক্সিজেন কমে গিয়েছে জলে।’’
আর এক বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, সব জায়গায় যে জল দূষিত হয়েছে, তেমনটা না-ও হতে পারে। সরোবরের কয়েকটি বিশেষ ‘পকেটে’ হয়তো জল-দূষণের ঘটনা ঘটেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের শিক্ষক পঙ্কজকুমার রায় বলেন, ‘‘পুজোর উপকরণগুলি জলে পড়ার কারণে দূষণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তার ফলে অনেক জায়গার জল টক্সিকও হয়ে যেতে পারে। তার জেরে মাছ, কচ্ছপ মারা যেতে পারে। তবে দূষণের মাত্রা কী, তা সরোবরের সব জায়গায় হয়েছে কি না, জলের নমুনা পরীক্ষার পরেই সে সব বোঝা যাবে।’’
পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘ছটপুজোর ফলে জল দূষিত হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই মাছ এবং কচ্ছপ মারা গিয়েছে।’’ যার প্রেক্ষিতে কেএমডিএ-র এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘কী কারণে ওই মাছ অথবা কচ্ছপ মারা গিয়েছে তা হঠাৎ করে বলা সম্ভব নয়। জলের নমুনা পরীক্ষা করে তবেই বলা সম্ভব যে দূষণ থেকেই এই রকম ঘটনা ঘটেছে কি না। সরোবরের জলের নমুনা ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে।’’
কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বিক্ষিপ্ত ভাবে এত বড় জলাশয়ে অনেক মাছ রয়েছে। কচ্ছপও রয়েছে। কখনও-কখনও মাছ মরে। তবে সেটি সংখ্যায় খুব বেশি নয়। তাঁদের যুক্তি, যদি জলে দূষণই হয়, তা হলে প্রচুর সংখ্যায় মাছ মারা যেত। তবে ছটপুজোর আগে বা চলতি বছরের কোনও সময়েই এই জলে প্রচুর সংখ্যায় মাছ মারা যায়নি বলে কেএমডিএ সূত্রের খবর।
প্রতি মাসে এক বার করে এমনিতেই সরোবরের জলের নমুনা পরীক্ষা করে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তাতে সরোবরের জলের মান ‘সি’ ক্যাটেগরি এসেছে। জাতীয় পরিবেশ আদালতে সে কথা জানিয়েওছে কেএমডিএ। কিন্তু ছটপুজোর ফলে সরোবরের জলে দূষণের মাত্রা কত হয়েছে, তা পরবর্তী পরীক্ষাতেই বোঝা যাবে বলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর।