সম্প্রীতি: এসএসসি উত্তীর্ণ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান বিক্ষোভ, ধর্না মঞ্চে বসেই উপোস ভেঙে মিলেমিশে ইফতারের খাওয়াদাওয়া নিজস্ব চিত্র
বিক্ষোভ আন্দোলনে নামার সময়ে ওঁরা একে অপরকে ভাল করে চিনতেন না। কেউ এসেছিলেন মালদহ থেকে, কেউ উত্তর ২৪ পরগনা থেকে, কেউ কলকাতা, কেউ বা বীরভূম থেকে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা চাকরিপ্রার্থীরা ধর্না মঞ্চে উপস্থিত হয়ে একসঙ্গে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন চাকরির দাবিতে। সেই ধর্না মঞ্চে কেটে গিয়েছে ৭৯ দিন। এই ৭৯ দিনে পারস্পরিক পরিচিতি গড়িয়েছে বন্ধুত্বে। এখন সেই বন্ধুত্বই সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছে। ধর্না মঞ্চে আন্দোলনরত মোয়াজ্জেম, জসিমউদ্দিনদের সঙ্গে রমজানের রোজা পালন করছেন
তৃণা, অভিষেকরাও। সারা দিন উপবাসের পরে বিকেলে একসঙ্গেই তা ভাঙছেন ওঁরা।
সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের পাঁচ নম্বর গেটের কাছে গত ৭৯ দিন ধরে চলছে এসএসসি পাশ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না ও বিক্ষোভ। তাঁদের অভিযোগ, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকতার পরীক্ষায় এসএসসি পাশ করার পরে মেধা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা বঞ্চিত। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁরা অনশন-বিক্ষোভ করেছিলেন ধর্মতলায়। সে বার দ্রুত চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রক্ষা করা হয়নি। তাই ফের তাঁরা বিক্ষোভে বসেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দাবি পূরণ হওয়ার আগে ধর্না মঞ্চ থেকে উঠবেন না।
ধর্না মঞ্চে বসেই রবিবার এক চাকরিপ্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন বললেন, ‘‘ধর্না মঞ্চে এ বারের রোজা পালনটা সত্যিই অন্য রকম। এই মঞ্চ এখন সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছে। রমজান মাস শুরু হওয়ার পরেই রোজ রাত তিনটের সময়ে আমাদের ঘুম থেকে তুলে দেন অভিষেক, রাহুলরা। একসঙ্গে মিলে ভোরে সূর্য ওঠার আগে আমরা খাবার খাই। সারা দিন ওঁরাও হয়তো আমাদের মতোই না খেয়ে থাকেন। বিকেলে আমরা একসঙ্গে ফল খেয়ে রোজা ভাঙছি।’’
এ দিন বিকেলে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের কাছে একটি ফলের দোকানে ফল কিনতে গিয়েছিলেন তৃণা হালদার। তিনি বলেন, ‘‘ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছি। রোজা ভাঙার পরে জসিমউদ্দিন, শামসুদ্দিনদের জন্য ফল কেটে দেব। ওঁরা কিছু খাচ্ছেন না বলে আমাদেরও সারা দিন
কিছু খাওয়া হচ্ছে না। ওঁদের সঙ্গে আমরাও সন্ধ্যায় বসে মুড়ি, ছোলা, খেজুর-সহ নানা রকম ফল খাব। এ ভাবে আমাদের বন্ধুত্বও যেমন
বাড়ছে, তেমনই আন্দোলনও আরও জোরদার হচ্ছে।’’
এ দিন সন্ধ্যা নামতেই ওঁরা বিক্ষোভ মঞ্চে বসে একসঙ্গে বেলের শরবত খেয়ে রোজা ভাঙলেন। ছোট ছোট বাটিতে খেজুর, পেঁপে, আম, কলা, জামরুল সাজাচ্ছিলেন তৃণা ও মোয়াজ্জেমরা। মালদহের মতিউর বললেন, ‘‘এই ধর্না মঞ্চে চাকরিপ্রার্থীরা এক-এক জন এক-একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক। কিন্তু তা বলে আমাদের মধ্যে কোনও রকম শক্রতা বা বিরোধিতার ভাবনা নেই। যেমন বিরোধ নেই আমাদের ধর্মেও।’’
আর এক বিক্ষোভকারীর কথায়, ‘‘আমাদের যে রিলে অনশন চলছিল, সেই অনশন এখন আর করছি না। আমরা বরং সবাই মিলে রোজা রাখছি। ভোরে সূর্য ওঠার আগে খেয়ে নিচ্ছি, আবার সূর্য ডোবার পরে খাবার খাচ্ছি। রোজার মাসটা এ রকমই চলবে।’’ মোয়াজ্জেম বললেন, ‘‘এই ধর্না মঞ্চে এসে বুঝলাম, সকলে একসঙ্গে চললেই আন্দোলন জোরদার হয়। তৃণা বা মালাদের বাড়ি থেকে আত্মীয়েরা এসে নববর্ষের গণেশপুজোর প্রসাদ দিয়ে গিয়েছেন। সেটাও আমরা একসঙ্গে সবাই মিলে খেয়েছি। তবে খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়েই কোভিড-বিধি মানা হচ্ছে। এক থালা থেকে সকলে মিলে খাচ্ছি না। খাওয়ার সময় বাদে সর্বক্ষণই মাস্ক পরে থাকছি।’’