Kalighat Temple

ভিতরে নিয়ম মানলেও বাইরে বিধিভঙ্গেরই ছবি কালীঘাটে

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পুলিশি ঘেরাটোপে ছিল মন্দির চত্বর। পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি মেনেই লাইন দিয়ে দর্শনার্থীরা দু’নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে চার নম্বর গেট দিয়ে বেরোন।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২১ ০৫:১৮
Share:

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দেওয়ার লাইনে দূরত্ব-বিধির বালাই নেই। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বৈশাখের প্রথম দিনে করোনা সংক্রমণের বিধিনিষেধ মেনেই দর্শনার্থীদের পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করল কালীঘাট মন্দির কমিটি। যদিও মন্দিরের বাইরে হালখাতার পুজো ঘিরে দেখা গেল অব্যবস্থা। বিধি ভাঙার সেই দায় অবশ্য মন্দির কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি দর্শনার্থী এবং পুরোহিতদের উপরেই চাপিয়েছেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পুলিশি ঘেরাটোপে ছিল মন্দির চত্বর। পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি মেনেই লাইন দিয়ে দর্শনার্থীরা দু’নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে চার নম্বর গেট দিয়ে বেরোন। তবে ভিড়ের চাপ বাড়ায় পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে কিছু দর্শনার্থীকে প্রবেশ করানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। দু’নম্বর গেটের স্যানিটাইজ়ার টানেলের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের জীবাণুমুক্ত করিয়ে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল বলে জানাচ্ছে কালীঘাট মন্দির কমিটি। ভিড় বাড়তেই মাঝেমধ্যে গেট বন্ধ করেও দেওয়া হচ্ছিল।

কালীঘাট মন্দিরে নতুন বছরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুজো দিতে আসেন মানুষ। এ দিকে, করোনার দ্বিতীয় প্রবাহে সংক্রমণও দ্রুত বেগে ছড়াচ্ছে। এ দিন তাই সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্রিয় ছিল মন্দির কমিটি এবং পুলিশ প্রশাসন।

Advertisement

নববর্ষের সকাল থেকেই মন্দিরের মূল গেটগুলিতে মোতায়েন ছিল পুলিশ। মুখে মাস্ক না থাকলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের, জানালেন এ দিন মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত লালবাজারের এক পুলিশকর্তা। মুখে মাস্ক ছাড়া কোনও দর্শনার্থীকেই মন্দিরের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন কালীঘাট মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার।

মন্দিরের ভিতরে সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকলেও বাইরের হালখাতা পুজোয় তার কোনও চিহ্ন নজরে ছিল না। বরং দেখা গেল, পাঁচ নম্বর গেটের সামনে ও আশপাশে কাপড়ের ছাউনির নীচে ঠেলাঠেলি করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হালখাতার পুজোর হিড়িক। সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “মানুষের সচেতনতা যদি না থাকে, তা হলে কী করা যাবে। তবে মন্দিরের আশপাশের গলিতে দূরত্ব বজায় রেখেই হালখাতা পুজোর ব্যবস্থা ছিল। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু দর্শনার্থী ও পুরোহিত মন্দির লাগোয়া চত্বরে গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হালখাতা পুজো করেছেন। নিষেধ করা সত্ত্বেও বেশির ভাগই শোনেননি।”

গত বছরের করোনা সংক্রমণের জেরে নতুন বছরের প্রথম দিনেও দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ ছিল কালীঘাট মন্দির। এ বছর সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে থাকায় দর্শনার্থীর ভিড় ততটা ছিল না বলে দাবি করলেন প্রসাদ ও ফুল ব্যবসায়ীরা।

তাঁদের কথায়, “প্রতি বছর এই দিনে প্রায় দেড় থেকে দু’লক্ষ দর্শনার্থী পুজো দিতে আসতেন। চার থেকে পাঁচ ধরনের প্রসাদ তৈরি হত। কয়েক হাজার কিলোগ্রাম প্রসাদ বিক্রি হত। এ বছর মেরেকেটে হাজার চল্লিশেক দর্শনার্থী এসেছেন। প্রসাদ বিক্রি তেমন হয়নি। লাভের জায়গায় বরং লোকসান হয়েছে বলা যায়।” একই অবস্থা ফুল ব্যবসায়ীদের। তাঁদের কথায়, “এমনিতেই ফুলের বাজার চড়া। ভিড়ের আশা করে মালা ও ফুল তোলা হয়েছিল। কিন্তু ততটা বিক্রি হল না।”

সকাল থেকে হা-হুতাশ করছেন পাণ্ডারাও। অধিকাংশ যজমান আসেননি। পরিচিত যজমানদের ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
কালীঘাট মন্দিরের পাণ্ডা মঙ্গল ঘোষাল বলেন, “সকাল থেকে তক্তপোশে বসে আছি। সকাল ন’টার পরে দু’জন যজমান এসেছেন। তাঁদের হালখাতা পুজো করেছি। ব্যস। আর কেউ আসেননি।”

কালীঘাট থানা সূত্রের খবর, নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাট মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মূল মন্দিরের সিঁড়ির উপরে কাঠের পাটাতন দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা করে মুখ্যমন্ত্রীর হুইলচেয়ার গর্ভগৃহ পর্যন্ত ঢোকানো হয়েছিল। হুইলচেয়ারে বসেই তিনি আধ ঘণ্টা পুজো করেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement