coronavirus

Tuberculosis: অতিমারিতে ঢিলেমি নয় যক্ষ্মার চিকিৎসায়, বলছে স্বাস্থ্য দফতর

আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও যক্ষ্মার চিকিৎসায় আরও বেশি জোর দেওয়া উচিত।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২১ ০৫:৫৯
Share:

প্রতীকী চিত্র।

শহর কলকাতায় গত দেড় বছরে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও করোনা পরিস্থিতিতে যাতে ওই রোগের চিকিৎসায় কোনও খামতি না থাকে, তার জন্য জোর দিতে হবে যক্ষ্মার পরীক্ষা এবং রোগীদের চিহ্নিতকরণের উপরে। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভাকে এমনটাই জানিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। প্রসঙ্গত, রাজ্যে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে তারাই। কলকাতায় সেই দায়িত্ব রয়েছে পুরসভার কাঁধে।

Advertisement

যক্ষ্মার চিকিৎসায় কলকাতা পুরসভাকে ইতিমধ্যেই দশটি জেলায় ভাগ করা হয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য, যক্ষ্মা রোগী খুঁজে বার করার উপরে জোর দেওয়া। এই ১০টি জেলা-যক্ষ্মা চিকিৎসা কেন্দ্র হল আলিপুর, বাগবাজার, বেহালা, হাজি মহম্মদ মহসিন স্কোয়ার, মানিকতলা, স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোড, ট্যাংরা, মনসাতলা, বোড়াল এবং টালিগঞ্জ। এ ছাড়াও শহরের ৬৩টি কেন্দ্রে যক্ষ্মা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বোড়ালে রয়েছে কলকাতা পুরসভা পরিচালিত যক্ষ্মা হাসপাতাল। সেখানে ইন্ডোর বিভাগের পাশাপাশি চিকিৎসা হয় আউটডোরেও। পুরসভা সূত্রের খবর, আগের তুলনায় গত দেড় বছরে ওই হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেকটাই কমেছে। রোগীর সংখ্যা কমেছে শহরের ১০টি জেলা-যক্ষ্মা চিকিৎসা কেন্দ্রেও। সরকারি ছাড়াও শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে যক্ষ্মার চিকিৎসা হয়। ওই হাসপাতালগুলিতে ভর্তি যক্ষ্মা রোগীদের উপরে নজরদারির দায়িত্বে থাকা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রকল্প-অধিকর্তা ঈশিতা রায় জানিয়েছেন, গত দেড় বছরে সেখানেও কমেছে রোগীর সংখ্যা।

পুরসভার তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে কলকাতায় যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪,৩৩০। পরের বছর সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮,১৫৮-য়। আবার ২০২০ সালে শহরে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা নেমে আসে ১১,৩২১-এ। চলতি বছরের ২৬ জুলাই পর্যন্ত শহরে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৯০।

Advertisement

পুর চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, গত দেড় বছরে অন্য রোগের তুলনায় করোনা নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অতিমারির সময়ে পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে করোনা চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে পুরসভাকে আগামী দিনে যক্ষ্মা চিকিৎসায় আরও সতর্ক হতে হবে। আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না।’’

পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘শহরে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে পুরসভা বছরভর কাজ করে। তার জন্যই হয়তো আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে যক্ষ্মা নির্ণয়ে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তার জন্য সব চিকিৎসা কেন্দ্রকে সতর্ক করা হয়েছে।’’

রাজ্যে যক্ষ্মা নিরাময় প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার এবং উপ-স্বাস্থ্য অধিকর্তা (টিবি) বরুণ সাঁতরা বুধবার বলেন, ‘‘করোনা আবহে সারা দেশেই যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও রাজ্যে যক্ষ্মা নিবারণের কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যক্ষ্মা আক্রান্তদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ বাড়াতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও যক্ষ্মার চিকিৎসায় আরও বেশি জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন প্রবীণ বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কোভিডের চাপের কারণে এখন যক্ষ্মার পরীক্ষা ঠিক মতো হচ্ছে না। অনেকে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে পরীক্ষা করাতে আসছেন না।’’ ধীমানবাবু জানান, কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা অনেক রোগী তাঁর কাছে কাশির সমস্যা নিয়ে আসছেন। তিন সপ্তাহ পরেও কাশি না কমলে সংশ্লিষ্ট রোগীকে যক্ষ্মা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মতে, যক্ষ্মা রোগীর কোভিড পরীক্ষার পাশাপাশি করোনা পজ়িটিভ রোগীর যক্ষ্মা পরীক্ষার ব্যবস্থাও সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাখা দরকার।

আর এক বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘যক্ষ্মা মূলত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বেরোনো ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। করোনা থেকে বাঁচতে নাগরিকদের অনেকেই মাস্ক পরে বেরোচ্ছেন। ফলে বাতাসে ড্রপলেট বেরোনোর আশঙ্কা খানিকটা কমেছে। সেই মাস্ক কাজ করছে যক্ষ্মা ছড়ানোর প্রতিরোধক ঢাল হিসেবে। এটাও আক্রান্তের সংখ্যা কমার আর একটি কারণ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement