SSKM

চিকিৎসক রয়েছেন চার ভাগের এক ভাগ! এ ভাবেই চলছে পিজি-র ট্রমা কেয়ার সেন্টার

হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে মোট শয্যা ২৪৪টি। তার মধ্যে ৩০টি রয়েছে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ওয়ার্ডের। প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০০-১২০ জন রোগী আসেন সেন্টারে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৪৭
Share:

চিকিৎসক কম ট্রমা কেয়ারে। — ফাইল চিত্র।

চিকিৎসকই রয়েছেন প্রয়োজনের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ! এমনই ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থা নিয়ে চলছে পূর্বাঞ্চলে চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টার। একই রকম হাল ট্রমা কেয়ারে নার্সদের সংখ্যার। স্বাস্থ্য ভবনের অবশ্য দাবি, প্রয়োজন মতো চিকিৎসক দেওয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে মোট শয্যা ২৪৪টি। তার মধ্যে ৩০টি রয়েছে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ওয়ার্ডের। প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০০-১২০ জন রোগী আসেন সেন্টারে। ট্রমা কেয়ারে মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা ৯০ জন। রয়েছেন ২১ জনের মতো। তাঁদের মধ্যেও অনেকে অবসরের দোরগোড়ায়। নার্সের পদ রয়েছে সাড়ে তিনশো। রয়েছেন অর্ধেক। সিস্টার ইন-চার্জ থাকার কথা ১৬ জন। রয়েছেন ১০ জন। প্রশ্ন হল, দিনের পর দিন পদ ফাঁকা থাকলে রোগীরা যথাযথ পরিষেবা পাবেন কী ভাবে?

রোগীরা তা পান না বলেই দাবি। তাই ট্রমা কেয়ারের পরিষেবা নিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন তোলেন তাঁদের পরিজনেরা। সম্প্রতি এসএসকেএমের কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও ট্রমা কেয়ার সেন্টারের কিছু অব্যবস্থা ধরা পড়েছিল। এ নিয়ে অনুষ্ঠান-মঞ্চ থেকেই তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রী দেখেছিলেন, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে শুধুমাত্র লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখা রয়েছে। সকালে ভর্তি হলেও তাঁর ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়ায় চিকিৎসা শুরু হয়নি। এর কয়েক দিন আগে, পিজি-র ট্রমা কেয়ারে রোগীর পরিজনদের হামলা ও চিকিৎসকদের হেনস্থার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাতে কেন সিনিয়র চিকিৎসকেরা থাকেন না?

Advertisement

যদিও তাঁর এই উষ্মা প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের অনেকের দাবি, অব্যবস্থার নেপথ্যে চিকিৎসক এবং নার্সের ঘাটতির বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীও উপলব্ধি করেছেন। তাই মঞ্চেই পিজি-র অধিকর্তাকে তিনি নির্দেশ দেন ট্রমা কেয়ারে লোকের প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলতে। এর পরেই এসএসকেএমের তরফে স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়েছে ট্রমা কেয়ারে মেডিক্যাল অফিসার এবং নার্সের ঘাটতির কথা। সেখানকার ক্রিটিক্যাল কেয়ারের জন্য দিনকয়েক আগেই পাঁচ জন মেডিক্যাল অফিসারকে নিযুক্ত করা হয়েছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘চিকিৎসক দেওয়া হচ্ছে। নার্সও দেওয়া হবে। আসলে সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসক, নার্সের সংখ্যায় ঘাটতি রয়েছে। তা-ও রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে খামতি না থাকে, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, ট্রমা কেয়ার সেন্টারে আরও একটি নতুন তল চালু করা হবে। তার জন্যও লোকবল চেয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তা-ও ধীরে ধীরে দেওয়া হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ নিয়ে অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় বসেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। সেখানে জানিয়ে দেওয়া হয়, ঢিলেমি বা গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। পর্যালোচনায় উঠে আসে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে প্রশাসনিক স্তরে খামতির দিকটিও।

জানা যাচ্ছে, এ বার থেকে এক জন করে শিক্ষক-চিকিৎসক রাতে থাকবেন ট্রমা কেয়ারের দায়িত্বে। ‘ভর্তি’ লেখা মাত্রই রোগী সরাসরি ওয়ার্ডে চলে যাবেন। তার কাগজপত্র আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করানো যাবে না। সেটা ঠিক মতো মানা হচ্ছে কি না, তা দেখতে সহকারী সুপারের পাশাপাশি এক জন ডেপুটি সুপারকেও (নন মেডিক্যাল) ট্রমা কেয়ারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে রোগী ভর্তির সব দিক তাঁরাই তদারক করবেন। প্রতিদিন সুপার কিংবা অতিরিক্ত সুপারের নেতৃত্বে বিশেষ দল দিনের যে কোনও সময়ে পরিদর্শন করবেন ট্রমা কেয়ার। রোগী স্থিতিশীল হলেই তাঁকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণ, এই কাজ ঠিক মতো না হওয়ায় শয্যা-সঙ্কট হচ্ছে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement