উদ্বিগ্ন: বুধবার এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারের বাইরে দিব্যাংশু ভগতের সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় বসে মা রিমা ভগত (ছবিতে ডান দিকে) এবং অন্য পরিজনেরা। হুগলির পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম সাত বছরের দিব্যাংশু গত ছ’দিন ধরে এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল চত্বরের বাইরে খাটানো তাঁবুতে রাত কাটছে তার পরিবারের সদস্যদের। নিজস্ব চিত্র
স্কুলে আচমকা অভিযান চালিয়ে গাড়ির স্বাস্থ্য ছাড়াও চালকের পরিচয়পত্র সংক্রান্ত নথি পরীক্ষা করবেন পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। সেখানে কোনও রকম অনিয়ম পাওয়া গেলে স্কুলগাড়ি আটক করে প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলের জন্যে সুপারিশ করা হবে। বুধবার পরিবহণ ভবনে পুলকার এবং স্কুলবাস সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা।
হুগলির পোলবায় স্কুলগাড়ি দুর্ঘটনার পরে নড়চড়ে বসেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। ইতিমধ্যেই পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে স্কুলগাড়ি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের সচেতন করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো স্কুলশিক্ষা দফতর গত সোমবার এক সরকারি নির্দেশিকায় পুলকারগুলির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র (ফিটনেস সার্টিফিকেট) উইন্ড স্ক্রিনে আটকে রাখার কথা বলেছে। ওই নির্দেশিকায় সরকারি-বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষকে পুলকারের স্বাস্থ্য শংসাপত্র ছাড়াও গাড়িচালকের পরিচয়পত্র সংক্রান্ত যাবতীয় নথি চেয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
এ দিনের বৈঠকে পুলকার এবং স্কুলবাস সংগঠগনের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, প্রয়োজনীয় সতর্কতা ছাড়াই অবৈধ ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে স্কুলগাড়ি চলছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে সেগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক বার কোনও ক্রমে সরকারি শংসাপত্র আদায় করে নিতে পারলেই হল। অভিযোগ, অনেক স্কুলগাড়ির মালিকই আর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ধার ধারেন না। অথচ স্কুলগাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র থাকাই কিন্তু যথেষ্ট নয়। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি।
পুলিশের তরফে রাস্তায় চালক এবং গাড়ির নথি পরীক্ষা করা হলেও অন্যান্য কারিগরি বিষয় যাচাই করা তাদের সম্ভব নয় বলেই দাবি। এ দিকে, পরিবহণ দফতরের পক্ষেও সব সময়ে টানা অভিযান চালানো সম্ভব নয়। এই সমন্বয়ের ঘাটতি দূর করতেই পরিবহণ এবং পুলিশের আধিকারিকেরা যৌথ ভাবে অভিযান চালাবেন বলে ঠিক হয়েছে। আপাতত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা যাতে বিপাকে না পড়ে, সে দিকে নজর রেখেই অভিযান চালানো হবে।
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ দত্ত বলেন, ‘‘অভিভাবকেরা যাতে সন্তানদের স্কুলে আসার ক্ষেত্রে অনিয়ম মেনে না নেন, তা দেখাও জরুরি। কারণ বহু ক্ষেত্রে অনিয়ম তাঁরা মেনে নেওয়ায় সমস্যা বাড়ে।’’ ওয়েস্ট বেঙ্গল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারেজ ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টানা নজরদারি ছাড়া এই অসুখ সারানো মুশকিল।’’
শহরের যে স্কুলগুলির নিজস্ব স্কুলবাস ও পুলকার আছে সেখানে অনেকটাই নিয়ম মেনে চলা হয় বলে দাবি অধিকাংশ সরকারি এবং বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষের। স্কুলশিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা এবং পরিবহণ দফতরে এ দিনের বৈঠকের প্রেক্ষিতে সাউথ পয়েন্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের নিজস্ব বাসে ফিটনেস সার্টিফিকেট সব সময়ে থাকে। এ ছাড়া পড়ুয়াদের নিরাপত্তার জন্য বাসে যা যা প্রয়োজন সবই আছে।’’ তবে পুলকার যে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে নেই সে কথাও স্বীকার করেন তিনি। সরকারি নির্দেশিকা হাতে পেলে পুলকার সম্পর্কে যাবতীয় সতর্কতা মেনে চলা হবে বলে তাঁর আশ্বাস।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘স্কুলের নিজস্ব গাড়ি নেই। পড়ুয়ারা কোন গাড়িতে যাতায়াত করছে, আমাদের কোনও নজরদারি নেই। কিন্তু সরকারি নির্দেশ এলে নজর রাখতে হবে।’’ পাশাপাশি তাঁর প্রস্তাব, ‘‘অভিভাবকেরা সন্তানদের নাম, ক্লাস, রোল নম্বর এবং পুলকারের নম্বর যদি স্কুলকে জানিয়ে রাখেন, তা হলে নজরদারির কাজে সুবিধা হবে।’’