‘ট্রান্সজেন্ডার’ তথা রূপান্তরকামী মেয়েদের নিয়ে ছকে বাঁধা ধারণাটাই খানখান করে দিলেন কলকাতার রাজাবাজারের তরুণী।
‘‘কে বলে, ট্র্যাফিক সিগন্যালে ভিক্ষা করা ছাড়া কিছু পারেন না ওঁরা! ওঁদের গুণপনা দেখে বরং হিংসেই হয় আমার।’’— হাসতে হাসতে কথাগুলো বললেন তাহসিনা। রাজাবাজারের মেয়েটির নিজের মামাই আদতে রূপান্তরকামী, অর্থাৎ শরীরে পুরুষ হয়েও মনে নারী।
বুধবার বিকেলে আমেরিকান সেন্টারে এ রাজ্যের রূপান্তরকামীদের প্রতিভার নানা দিকই উঠে আসতে দেখা গেল। বেহালার বাসিন্দা দিয়ার বুটিকের রকমারি পোশাক বা রুপো-পেতলের গয়নার পাশেই মালদহের জয় সাহা কুণ্ডু নিয়ে এসেছেন পাটের বাহারি পাপোশ, আসন বা ব্যাগ। চন্দননগরের সোহিনীদের বিচ্ছুরণ আবার রংবেরঙের মোমবাতির কাজে।
রূপান্তরকামীদের ক্ষমতায়নের একটি মঞ্চ সাতরঙ্গি-র আসরে মঞ্চেও রবীন্দ্রনৃত্যে চমকে দিলেন কাশ্মীরা ও সোহিনী। ভাষ্যে শোনা গেল তনুশ্রীর কণ্ঠ। যৌন সংখ্যালঘু এই রূপান্তরকামীদের হাতের কাজ বিভিন্ন সরকারি মেলা-অনুষ্ঠানে মেলে ধরার অঙ্গীকার করলেন রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের সহ-সভাপতি মারিয়া ফার্নান্ডেজ।
মারিয়ার কথায়, ‘‘মিলন মেলার মাঠে হস্তশিল্প মেলা বা পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে বড়দিনের উৎসব— তাতেও রূপান্তরকামীদের হাতের কাজের সামগ্রী রাখা হবে।’’ মারিয়ার দাবি, সংখ্যালঘু ধর্মের লোকেদের মধ্যেও অনেক রূপান্তরকামী রয়েছেন, যাঁরা এই সরকারি উদ্যোগে উপকৃত হবেন। বছর দুই আগে সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়েই পুরুষ বা মহিলাদের মতো রূপান্তরকামী নারী-পুরুষদেরও মৌলিক অধিকার স্বীকার নেওয়া হয়। অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণি হিসেবে মেনে নিয়ে রূপান্তরকামীদের শিক্ষা, চাকরিতে সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তাতে যে এখনও খামতি আছে, তা মেনে নেওয়া হলেও শিল্পপতি নমিত বাজোরিয়া, চিকিৎসক শতদল সাহা বা ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালেরা তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে কয়েক জন ট্রান্সজেন্ডারকে সুযোগ দেওয়ার কথা বললেন। সরকারি শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীও বললেন, রূপান্তরকামীদের চাকরিতে নিয়োগ করেছেন তাঁরা। রাজ্যের ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের দুই সদস্য অপর্ণা ও রঞ্জিতাও বলছিলেন, চেষ্টা চলছে রাজ্যে প্রশাসনের দোরে দোরে রূপান্তরকামীদের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে।
তবে ইলসামপুরের রূপান্তরকামী নারী তথা সমাজকর্মী জয়িতা মণ্ডল বললেন, ‘‘ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাজ প্রত্যন্ত অঞ্চলে রূপান্তরকামীদের কাছে পৌঁছে দিতে এখনও কয়েক কদম এগোতে হবে।’’ সবার কথা শুনতে শুনতে আমেরিকান সেন্টারের কনসাল-জেনারেল ক্রেগ হলও মনে করালেন, রূপান্তরকামীদের অধিকারের লড়াই ও মানবাধিকারের লড়াইয়ে ফারাক নেই।