দুই শিশু-সহ অরক্ষিত সব আরোহীই। রাজাবাজারে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
মোটরবাইক বা স্কুটারের আরোহী শিশুদেরও যাতে হেলমেট পরানো হয়, তা নিশ্চিত করতে কয়েক বছর আগে প্রচার শুরু করেছিল কলকাতা পুলিশ। নানা পোস্টার দেওয়া হয়েছিল শহর জুড়ে। যেমন, ‘বাবার মাথা ভীষণ দামি হেলমেটেতে ঢাকা, ছোট্ট মাথার নেই কোনও দাম, আমার মাথা ফাঁকা!’ এর পাশাপাশি শহরে চালানো হয়েছিল সচেতনতার প্রচারও। তা সত্ত্বেও শিশুদের হেলমেট না পরানোর প্রবণতায় পরিবর্তন আনা যায়নি।
দু’চাকার যানে শিশুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সম্প্রতি নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, বাইকে শিশুদের তুললে হেলমেট পরানো বাধ্যতামূলক। সেই সঙ্গে অন্যান্য সুরক্ষা-সরঞ্জামও ব্যবহার করতে হবে। বাইকে কোনও শিশু বসলে গতি ৪০ কিলোমিটারের বেশি তোলা যাবে না। ৯ মাস থেকে চার বছর বয়সি শিশুদের নিয়ে বাইক সফরের ক্ষেত্রে এই নয়া নির্দেশিকা জারি হয়েছে। আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই নিয়ম গোটা দেশে চালু হবে বলে কেন্দ্র জানিয়েছে। হাতে এক বছর সময় থাকলেও কলকাতায় অবশ্য এই নিয়ম মানার সামান্যতম লক্ষণ কখনও ছিল না, এখনও নেই।
ধরপাকড়ের ভয় সত্ত্বেও হেলমেট ছাড়াই শিশুদের বাইকে বসিয়ে চলছে যাতায়াত। জরিমানার ভয়ে বাবা-মায়ের মাথা হেলমেটে ঢাকা থাকলেও ছোট্ট শিশুর মাথা পুরোপুরি অরক্ষিত। বড় রাস্তাগুলিতে এই প্রবণতা খানিকটা কম হলেও অলিগলিতে নিয়ম মানেন না অধিকাংশ বাইকচালকই। স্কুলে যাওয়া বা স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রতিদিন অসংখ্য পড়ুয়াকে এ ভাবে দেখা যায় বলে অভিযোগ।
সোমবার রাজডাঙা মেন রোডে বিনা হেলমেটের শিশুকে নিয়ে বাইক ছুটিয়ে যাওয়া এমনই এক অভিভাবককে দাঁড় করাতেই পুলিশকে শুনতে হল, ‘‘বাচ্চা তো। কয়েক দিন বাদে বাদেই চেহারা বদলে যাচ্ছে। হেলমেট কিনলে সেটা তো দু’দিন বাদেই বাদ দিতে হবে।’’ প্রায় একই কথা শোনা গিয়েছে উল্টোডাঙা রোডে, ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে বেরোনো এক বাবার গলাতেও। স্কুটারের সামনের অংশে বাচ্চাকে দাঁড় করিয়েও যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। বালিগঞ্জের কাছে দেখা গেল, ভাইকে স্কুটারের সামনে দাঁড় করিয়ে যাচ্ছেন তরুণী ঈশিকা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘পিছনে বসালে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। সামনে থাকলে দু’পাশে আমার পা থাকায় পড়ার আশঙ্কা থাকে না।’’ কিন্তু বাচ্চার হেলমেট নেই কেন? তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এত ছোট বাচ্চাদের আবার হেলমেট পাওয়া যায় নাকি?’’
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা দাবি করেছেন, প্রচারের পাশাপাশি নিয়মিত অভিযানও চালানো হয়। তবে নয়া নির্দেশিকা প্রসঙ্গে ট্র্যাফিকের এক কর্তা বললেন, ‘‘পরিবহণ দফতরের তরফে এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি। কেন্দ্র নির্দেশিকা জারি করলে তার প্রেক্ষিতে রাজ্যের পরিবহণ দফতরের তরফে নতুন নির্দেশিকা জারি করে জানানোর কথা। এখনও এমন কিছু হয়নি।’’