উজ্জ্বল রঙের জ্যাকেট ছাড়াই যান নিয়ন্ত্রণে এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। রবিবার, শোভাবাজার মোড়ে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
খোদ রক্ষকদেরই নেই নির্দেশ মানার বালাই! অকারণে ঝুঁকি নেওয়ার বেপরোয়া মনোভাবেও কম যান না তাঁরা। অভিযোগ, রাতে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রঙের জ্যাকেট পরা এবং কাঁধে ‘বডি লাইট’ লাগানোর কড়া নির্দেশিকা থাকলেও তা উড়িয়েই রাস্তায় নেমে চলছে যানশাসন। মাস চারেক আগে দুর্ঘটনায় এক পুলিশকর্মীর মৃত্যুর পরে এ বিষয়ে কড়াকড়ির নির্দেশ দিয়েছিলেন কর্তারা। দিনকয়েক পরিস্থিতি বদলালেও তার পরে আবার যে কে সে-ই।
এ বছরেরই ১৪ জানুয়ারির ঘটনা। অন্যান্য দিনের মতোই মহাত্মা গান্ধী রোডে ডিউটি করছিলেন জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের কর্মী মহম্মদ নাসিরউদ্দিন। আচমকা একটি মালবোঝাই লরি এসে পিষে দেয় বছর ৩০-এর ওই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। লরির চালককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশকে ওই চালক জানিয়েছিলেন, নাসিরউদ্দিনকে দেখতেই পাননি তিনি। ওই ঘটনার পরেই রাতের শহরে যানশাসনে নিযুক্ত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের জন্য এক গুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছিল লালবাজার। প্রতিটি গার্ডেই সেই নির্দেশ পাঠানো হয়। ওই নির্দেশে বলা হয়েছিল, পুলিশকর্মীদের উর্দির উপরে উজ্জ্বল রঙের জ্যাকেট পরতে হবে। পাশাপাশি, কাঁধে ‘বডি লাইট’ লাগানোর কথাও বলা হয়েছিল। সেই ঘটনার পরে দিনকয়েক ওই নির্দেশ মেনে রাস্তায় ডিউটি করতে দেখা গিয়েছিল পুলিশকে। কিন্তু অভিযোগ, কিছু দিন পরে পুলিশকর্মীদের অধিকাংশই ফিরে গিয়েছেন পুরনো অভ্যাসে।
ইএম বাইপাস, এ জে সি বসু রোড, রুবি, উল্টোডাঙা, রাসবিহারী-সহ শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গিয়ে দেখা গেল, উজ্জ্বল পোশাক না পরে এবং বডি লাইট না লাগিয়েই যানশাসন করছেন ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা। দু’-এক জনকে উর্দির উপরে উজ্জ্বল রঙের জ্যাকেট পরতে দেখা গেলেও বাকিদের সে সবের বালাই ছিল না।
গত জানুয়ারিতে মহাত্মা গান্ধী রোডের যেখানে দুর্ঘটনায় ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল, সেখানেও দেখা গেল একই রকম গা-ছাড়া ভাব। নির্দেশ না মানা প্রসঙ্গে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের প্রশ্ন করতেই কোথাও উত্তর মিলল, ‘‘পোশাক পরে রয়েছি তো!’’ কেউ আবার বললেন, ‘‘মাথার উপরে এত বড় আলো, তাতেও চালকেরা আমাদের দেখতে পাবেন না!’’ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী আবার বললেন, ‘‘গরমে এমনিতেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্র্যাফিক সামলানো কষ্টের। উর্দির উপরে আবার জ্যাকেট চাপালে আরও বেশি কষ্ট হয়। তখন বেশি ক্ষণ ধরে ডিউটি করা যায় না।’’ কিন্তু কাঁধে উজ্জ্বল আলো কেন পরছেন না? এ প্রশ্ন শুনেই অবশ্য উত্তর এড়িয়ে গেলেন তিনি।
সম্প্রতি রাতের শহরে যানশাসন করা ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ডিউটি করার নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার। ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এই নির্দেশ বলে মনে করছেন তাঁদের একটি বড় অংশ। সেই নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে গাফিলতি তেমন দেখা না গেলেও রাতের শহরে যানশাসন করার সময়ে উর্দির উপরে উজ্জ্বল রঙের জ্যাকেট পরার ক্ষেত্রে কেন এতটা গা-ছাড়া ভাব, এ প্রশ্নের অবশ্য জবাব মিলছে না।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের সুরক্ষার কথা ভেবেই একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গার্ডকেই এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। মাঝেমধ্যেই এ বিষয়ে নজরদারি চালানো হয়। যদি কোথাও নির্দেশ আমান্য করার ঘটনা ঘটে, তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।