আটকে অ্যাম্বুল্যান্সও। মঙ্গলবার শহরে। — নিজস্ব চিত্র
ওয়েলিংটন স্কোয়ারে পৌঁছে হঠাৎই থমকে গেল কয়েক হাজার মানুষের পদযাত্রা। মিনিট পনেরোর জন্য। তার পরে চলতে শুরু করল ঠিকই, কিন্তু যে রাস্তায় মিছিলের ঢোকার কথা, সেই এস এন ব্যানার্জি রোডে না গিয়ে তার আগেই ঢুকে পড়ল লেনিন সরণিতে।
পরিণাম— যান শাসনের একেবারে দফারফা।
আশঙ্কা ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রার ফলে যানজটে ভুগতে হবে শহরবাসীকে। মঙ্গলবার, কাজের দিন দুপুরে মিছিল বলে কথা। কিন্তু সেই পদযাত্রা বা মিছিল যে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেখান দিয়ে না গিয়ে অন্য রাস্তা ধরায় ভোগান্তি বাড়ল আরও কয়েক গুণ। মধ্য কলকাতা তো বটেই, উত্তর কলকাতারও বিস্তীর্ণ অংশ এবং দক্ষিণের কিছুটা অবরুদ্ধ হয়ে রইল মিছিলের জেরে।
কারণ, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মিছিলের নির্দিষ্ট পথ আগে থেকেই বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু মিছিল ঢুকে পড়ে তার সমান্তরাল অন্য রাস্তায়। দু’টিই মধ্য কলকাতার অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এতে যে জট তৈরি হয়, তা কাটানোর ক্ষমতা পুলিশের ছিল না। ঘোষণা মতো রাস্তায় না গিয়ে অন্য রাস্তায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই বলে পুলিশ ও তৃণমূলের একাধিক সূত্রের খবর! এ ছাড়া, এক জায়গায় মিছিল পনেরো মিনিটের জন্য দাঁড়িয়েও পড়েছিল। তাতেও তৈরি হয় যানজট। নাকাল হন পথে বেরোনো মানুষ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রা বেরোয় শ্যামবাজার থেকে। ঠিক ছিল, বিধান সরণি হয়ে কলেজ স্ট্রিট, নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট ধরে তার পরে এস এন ব্যানার্জি রোড দিয়ে মিছিল পৌঁছবে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে।
বেলা ১২টার আগেই শহর ও শহরতলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা ভাড়া করা বাস ও বিভিন্ন গাড়িতে চড়ে শ্যামবাজারে পৌঁছন। এর আঁচ পড়ে বি টি রোডে। এমনিতেই সাঁতরাগাছি সেতু বন্ধ থাকায় ডানলপ মোড়ে এখন গাড়ির চাপ বেশি। তার উপরে মিছিলের ফলে অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। ডানলপের বাসিন্দা, বৃদ্ধ সুমন্ত ঘোষ শ্যামবাজারে চিকিৎসককে দেখাতে যাচ্ছিলেন। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বাস থেকে গলদঘর্ম হয়ে ঘণ্টাখানেক পরে নেমে পড়েন তিনি। এ দিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ভূপেন বসু অ্যাভিনিউ। ফলে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে বি টি রোডে যাওয়া গাড়িগুলি বাগবাজার স্ট্রিট দিয়ে বার করে দেওয়া হয়। কিন্তু তৃণমূলকর্মীদের কয়েকটি বাস বাগবাজার স্ট্রিট দিয়ে বেরিয়ে বি টি রোডের দিকে না গিয়ে উল্টো পথে শ্যামবাজারের দিকে চলে গেলে গোল বাধে।
মিছিলের জেরে শ্যামবাজার, বিধান সরণি, বিডন স্ট্রিট, বিবেকানন্দ রোড, কলেজ স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোড, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, পার্ক স্ট্রিট, রেড রোড এবং এ জে সি বসু রোড ও জওহরলাল নেহরু রোডের একাংশে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চলাচল থমকে থাকে।
সব চেয়ে বেশি সমস্যা হয় যখন ওয়েলিংটন স্কোয়ারে পৌঁছে মিনিট পনেরোর জন্য থমকে যায় মিছিল। কেউই কিছু বুঝতে পারছিলেন না। বুঝে পাননি পুলিশের একাংশও।
এর পরে মমতা ফের হাঁটতে শুরু করেন। কিন্তু যে মিছিলের আরও এগিয়ে এস এন ব্যানার্জি রোড ধরার কথা, সেটি অত দূর না গিয়ে তার আগেই ডান দিকে লেনিন সরণিতে বেঁকে যায়। ট্রাফিক পুলিশ তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মিছিল ওই রাস্তায় ঢোকে ধর্মতলার দিকে যাবে বলে, আর তার উল্টো দিকে অর্থাৎ ধর্মতলার দিক থেকে গাড়িগুলি রওনা হয়ে গিয়েছে মৌলালির দিকে। মিছিলে বাধা পেয়ে আটকে যায় সেগুলি। অথচ বেশ খানিকক্ষণ আগে থেকেই মিছিল ঢুকবে বলে এস এন ব্যানার্জি রোড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সব কিছু তখন জট পাকিয়ে গিয়েছে। তবে স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ সে সব বলার সাহস পাননি।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার স্বীকার করে নেন, ‘‘পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মিছিলের যাওয়ার কথা ছিল এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে। তবে তাড়াতাড়ি ধর্মতলা পৌঁছতে তার আগেই লেনিন সরণি ধরেছে মিছিল।’’ তবে সুপ্রতিমবাবুর দাবি, ‘‘মিছিল হঠাৎ তার রাস্তা বদল করায় তেমন সমস্যা হয়নি। পুলিশ দ্রুত অবস্থা সামাল দিয়েছে।’’
মিছিল শেষ হওয়ার সময়ে বন্ধ রাখা হয়েছিল ধর্মতলা মোড়ের চার দিক। লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পার্ক স্ট্রিট থেকে হাওড়ামুখী গাড়ি ময়দান, রেড রোড, রাজভবনের পাশ দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ডোরিনা ক্রসিং অবরুদ্ধ থাকায় শহরের দক্ষিণ থেকে উত্তরমুখী গাড়ি দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে পার্ক স্ট্রিটে।