ফাইল চিত্র।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ফের তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে পর্যটন ব্যবসা। তাই গরমের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া বাতিল নয়, বরং স্থগিত রাখার আর্জি জানাচ্ছে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থা। এ বারের গরমের ছুটিতে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে বেড়াতে যাওয়ার বুকিং করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের এখন এই পরামর্শই দিচ্ছে ওই সংস্থাগুলি।
দেশে সংক্রমণের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কোথাও বেড়াতে যাওয়া যে প্রায় অসম্ভব, তা বুঝতে পারছে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিও। তাই এ বারের গরমের ছুটি উপলক্ষে যাঁরা ইতিমধ্যেই বুকিং করে ফেলেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশ এখন সেই পরিকল্পনা বাতিল করে পুরো টাকা ফেরত চাইছেন। ভ্রমণ সংস্থাগুলি অবশ্য চাইছে, পরিস্থিতি একটু ভাল না হওয়া পর্যন্ত ওই সমস্ত সফরের পরিকল্পনা পুরোপুরি বাতিল নয়, বরং আপাতত স্থগিত থাকুক।
বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থা জানাচ্ছে, অতিমারি পরিস্থিতির কারণে গত বছরেও পর্যটন ব্যবসা কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছিল। তবু গত ডিসেম্বরে সংক্রমণের প্রকোপ কম হওয়ায় অনেকেই বেড়াতে যেতে শুরু করেছিলেন। সেই মতো বিভিন্ন ভ্রমণ প্যাকেজের জন্য বুকিংও শুরু হয়েছিল। এক ভ্রমণ সংস্থার মালিক শুভ্র মুৎসুদ্দি বলেন, “জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণের প্রকোপ কম থাকায় অনেকেই গরমের ছুটির বুকিং শুরু করেছিলেন। কিন্তু তখন কে জানত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সব ফের তছনছ করে দেবে।”
‘ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’ (ট্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জন বসু বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে কেউই গরমের ছুটিতে বেড়াতে যাচ্ছেন না। ফলে যাঁরা বুকিং করেছিলেন, তাঁদের বাধ্য হয়ে পরিকল্পনা বাতিল করতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা তাঁদের অনুরোধ করছি, পুরোপুরি বাতিল না করে ভ্রমণ বরং স্থগিত রাখুন। পরিস্থিতি যখন ভাল হবে তখন প্রায় একই খরচে আমরা আপনাদের বেড়াতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।”
নীলাঞ্জনবাবু জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে অগ্রিম বুকিংয়ের টাকা ফেরত দিতে হলে কার্যত তাঁদের নিজের পকেট থেকেই সেই অর্থ দিতে হবে। কারণ ভ্রমণকারীর থেকে নেওয়া অগ্রিম টাকা দিয়েই ভ্রমণ সংস্থাগুলি হোটেল, গাড়িচালক, গাইডদের আগাম টাকা দেন তাঁরা। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু খাতেও অগ্রিম দিতে হয় তাঁদের।
আর একটি ভ্রমণ সংস্থার মালিক সুদীপ্ত গোস্বামী বলেন, “আগাম টাকা যাঁদের দিয়েছি, তাঁদের থেকে তো সেই টাকা ফেরত পাব না। এমনিতেই ব্যবসার হাল খুব খারাপ। তাই যাঁরা বুকিং বাতিল করতে চাইছেন, তাঁদের অনুরোধ করছি, বেড়াতে যাওয়া স্থগিত রাখুন। তবে কেউ রাজি না হলে তাঁদের ক্ষেত্রে অগ্রিম পুরো টাকাই ফেরত দিতে হচ্ছে।” এক ভ্রমণ সংস্থার মালিক শঙ্কর বসু আবার জানালেন, গত জানুয়ারিতেই পরিস্থিতি তুলনায় অনুকূল থাকায় বেশ কয়েক দফায় কাশ্মীর ভ্রমণ করিয়েছে তাঁর সংস্থা। এ বারের গরমের ছুটিতেও কাশ্মীর বেড়াতে যাওয়ার চাহিদাও ভালই ছিল। কিন্তু বাধ সাধল করোনা। শঙ্করের কথায়, “বেড়ানো স্থগিত রাখার কথা বলছি বটে, কিন্তু সকলে সেই প্রস্তাবে তো রাজি না-ও হতে পারেন। এমন কয়েক জন আছেন যাঁরা গত বছরের গরমের ছুটিতে বেড়াতে যেতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করতে হয়েছে তাঁদের।”
টালিগঞ্জের বাসিন্দা অঙ্কুর রায় যেমন জানাচ্ছেন, গত বছরের মে মাসে তাঁদের শিমলা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংক্রমণের কারণে সেই ভ্রমণ স্থগিত রাখতে হয়। অঙ্কুরবাবু বলেন, “গত বছরের বেড়াতে যাওয়া স্থগিত করে ভেবেছিলাম, এ বছরের মে মাসে শিমলা যাব। কিন্তু এ বারও হল না। আর কত বার বেড়ানো স্থগিত করতে হবে জানি না। অতিমারি পরিস্থিতি থেকে পৃথিবী হবে স্বাভাবিক হবে, কেউ তা জানেন না!”
তবে এই পরিস্থিতিতেও আশায় বুক বাঁধছেন ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কেউ কেউ। শুভ্র যেমন বলছেন, “জুলাই মাসের কিছু বুকিং এখনও বাতিল হয়নি। পরিস্থিতি দ্রুত ভাল হবে, এই আশাতেই রয়েছি।”