আয়ুষ রায়চৌধুরী
সকালের ভরা বাজার। ভ্যান নিয়ে আনাজ বিক্রি করতে হাজির বিক্রেতারা। ইতস্তত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন বহু ক্রেতাও। আচমকাই গড়াতে শুরু করে রাস্তার ধারে দাঁড় করানো একটি টোটো। সে সময়ে এক মহিলা তাঁর আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন। টোটোর ধাক্কায় তিনি ছিটকে পড়েন। গাড়িটি তাঁকে কিছু দূর ছেঁচড়ে নিয়ে যায়। ঘটনাটি দেখে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। একটু ধাতস্থ হওয়ার পরে মহিলা তাঁর ছেলের খোঁজ করতে থাকেন। কিছু ক্ষণ পরেই দেখা যায়, টোটোর চাকার কাছে পড়ে আছে ছোট্ট শিশুটি। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আরও একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত বলে জানান।
মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে নিউ টাউনের পুরনো থানার কাছে। শিশুটির নাম আয়ুষ রায়চৌধুরী। তার বাবা বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। বিশ্বজিৎবাবু এবং তাঁর স্ত্রী মমতাদেবীর আর একটি ছেলে আছে। তার নাম পীযূষ। এই ঘটনায় নিউ টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে আয়ুষের পরিবার। তার ভিত্তিতে টোটোচালক অজয় রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চালকের বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ টাউনের পুরনো থানা সংলগ্ন ওই রাস্তায় রোজই ভ্যানে করে আনাজ নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। মঙ্গলবার সকালে স্ত্রী ও বছর পাঁচেকের মেয়েকে নিয়ে বাজার করতে গিয়েছিলেন অজয়। মেয়েকে টোটোয় বসিয়ে রেখে বাজার করছিলেন তাঁরা। চাবি লাগানো ছিল গাড়িতেই। এলাকাবাসী এবং পুলিশের অনুমান, কোনও ভাবে ছোট্ট মেয়েটি টোটোর সুইচ অন করে ফেলে। এর পরেই চলতে শুরু করে গাড়িটি। সে সময়ে আয়ুষকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন মমতাদেবী। টোটোর ধাক্কায় তিনি পড়ে যান। তাঁকে নিয়েই একটু দূর এগিয়ে যায় গাড়ি। আচমকা ঘটনাটি ঘটে যাওয়ায় প্রথমে কেউ কিছু বুঝতে পারেননি। কিন্তু মহিলাকে পড়ে যেতে দেখে সকলে ছুটে আসেন। ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান মমতাদেবী। জ্ঞান ফেরার পরে আয়ুষের খোঁজ শুরু করেন তিনি। তখন সকলের হুঁশ ফেরে। দেখা যায়, টোটোর নীচে আটকে রয়েছে ছোট্ট বাচ্চাটি। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুর্ঘটনায় অল্প জখম হয়েছেন মমতাদেবী। তবে টোটোয় বসা শিশুটির তেমন আঘাত লাগেনি বলেই স্থানীয় সূত্রের খবর।
কিন্তু সকালে এত লোকের ভিড়েও কারও ঘটনাটি চোখে পড়ল না? স্থানীয়দের বক্তব্য, ঘটনাটি এতই আচমকা ঘটে যে, কেউই কিছু বুঝতে পারেননি। আয়ুষের বাবা বিশ্বজিৎবাবু জানিয়েছেন, তাঁরা নিউ টাউনের একটি আবাসনে বছর দুয়েক ধরে বসবাস করছেন। ছোট ছেলের জন্মের এক মাস পরে তাঁরা মহারাষ্ট্র থেকে ওই অঞ্চলে আসেন। তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী রোজ সকালে পীযূষকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে যান। সঙ্গে থাকত আয়ুষও। তার পরে তাকে নিয়ে বাজার করে ফিরতেন মমতাদেবী। ওই দিন সকালেও সে ভাবে ফিরছিলেন।
মহিলা জানিয়েছেন, রাস্তা পেরোনোর সময়ে তাঁর চোখে পড়ে, একটি টোটো দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাতে বসে রয়েছে একটি বাচ্চা। কিন্তু কী ভাবে গাড়িটি চলতে শুরু করল, তা তিনি বুঝতে পারেননি বলেই জানিয়েছেন মমতাদেবী। ধাক্কা লেগে তিনি পড়ে যান এবং তার জেরে জ্ঞান হারান। সকলে তাঁকে তুলতেই ব্যস্ত ছিল। কিন্তু ততক্ষণে টোটোর চাকা ছোট্ট আয়ুষের মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে।