লালবাজার। —ফাইল চিত্র।
অস্বাভাবিক মৃ্ত্যু কিংবা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়না তদন্ত ব্যবস্থাকে এক ছাতার তলায় আনতে চাইছে কলকাতা পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, যেখানে ময়না তদন্ত হচ্ছে, সেই হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতেই বাকি সব প্রক্রিয়া করা হবে। পুলিশের দাবি, এই ব্যবস্থা চালু হলে আগের মতো মৃতের পরিবারকে ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন থানায় দৌড়তে হবে না। সব কাজই ওই পুলিশ ফাঁড়ি থেকে হয়ে যাবে। লালবাজার জানিয়েছে, পাইলট প্রকল্প হিসাবে এসএসকেএম হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানেই প্রথম এই প্রক্রিয়া চালু হওয়ার কথা রয়েছে চলতি মাসে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এক পুলিশকর্তা জানান, ময়না তদন্তের জন্য কিংবা তার পরে মরদেহ হাতে পেতে মৃতের পরিবারের সদস্যদের নানা ভাবে হয়রান হতে হয়। আবার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নথির জন্য থানায় থানায় ঘুরতে হয়। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে পরিবারের সদস্যদের আর কোথাও যেতে হবে না। ফাঁড়িতে নথি জমা দিলে পুলিশের পক্ষ থেকেই সব কাজ করে দেওয়া হবে। এই ব্যবস্থা সফল হলে কলকাতা পুলিশের বাকি এলাকাতেও একই ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
পুলিশ সূত্রের খবর, কোনও দেহের ময়না তদন্ত থেকে শুরু করে সেটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত একাধিক ধাপ রয়েছে, যার মধ্যে দিয়ে পরিজনদের যেতে হয়। এই সব কাজে একাধিক থানা যুক্ত থাকে। অভিযোগ, কোনও হাসপাতালে কারও মৃত্যু হলে সেই হাসপাতাল যে থানার অধীন, সেখান থেকে প্রথমে নথি সংগ্রহ করতে হয়। আবার ঘটনাস্থল যে থানার অধীন, সেখান থেকে হাসপাতালের ফাঁড়ির তরফে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়। যেমন, কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, কোনও মামলা হয়েছে কি না, ময়না তদন্তের সময়ে দেহের কোন কোন অংশ সংরক্ষণ করা হবে— এমনই নানা বিষয় জানতে চাওয়া হয় ওই থানার কাছে। এর পরে মৃতের পরিবার যেখানে থাকে, সেই এলাকার থানার কাছে জানতে চাওয়া হয়, দেহ কার হাতে তুলে দেওয়া হবে। এক পুলিশ অফিসার জানান, পুরো প্রক্রিয়ায় তিন-চারটি থানা জড়িয়ে থাকে। এতে যেমন সময় নষ্ট হয়, তেমনই হয়রানি হয় মৃতের পরিজনদের। তা এড়াতেই নতুন ব্যবস্থাটি চালু করার চেষ্টা করছে লালবাজার।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে একটি দুর্ঘটনায় এক জনের মৃত্যুর পরে পরিবারের হয়রানির বিষয়টি নজরে আসে পুলিশকর্তাদের। তার পরেই পুরো ব্যবস্থাকে সরল করতে সচেষ্ট হয় লালবাজার। গত মাসে নগরপাল বিনীত গোয়েলের নির্দেশে যে সব থানা এলাকায় বড় বড় হাসপাতাল বা মর্গ রয়েছে, তাদের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন লালবাজারের পুলিশকর্তার। তারই প্রথম ধাপ হিসাবে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িকে কেন্দ্র করে এই ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে পুলিশের তরফে।