উৎসাহ: ছুিটর দিনে শীতের ছোঁয়ায় ভিড় জমল আলিপুর চিড়িয়াখানায়। ছবি: সুমন বল্লভ।
এ যেন যাওয়ার আগে একবার ফিরে দেখা! গত কয়েক দিনে শীতের হঠাৎ পারদ পতন অন্তত এমনই মনে করাচ্ছে। নিম্নগামী পারদের সঙ্গে সকাল হতেই বাতাসে শিরশিরানি এক ধাক্কায় শহরে ফিরিয়ে এসেছে শীতের আমেজ। দিন কয়েকের বিরতির পরে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে আবার আবহাওয়ার হঠাৎ এই ভোল বদলই ভিড় বাড়িয়ে দিয়েছে চিড়িয়াখানা থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানে। সকাল সকাল গায়ে গরম পোশাক চাপিয়ে পরিবার নিয়ে কেউ চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়ার টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন, কেউ আবার শীতের আমেজ উপভোগ করতে সপরিবারে বসেছেন গঙ্গার পাড়ে।
তথ্য বলছে, গত চার দিনে শহরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমেছে প্রায় পাঁচ ডিগ্রি। দিন চার আগে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যেখানে ছিল ২০ ডিগ্রির থেকে একটু কম, রবিবার সেখানে সেই তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রির আশপাশে। আগামী কয়েক দিন শীতের এই আমেজ বজায় থাকবে বলেই হাওয়া অফিস সূত্রের খবর।
শীতের শেষবেলায় পারদের এই হঠাৎ পতনের সঙ্গে রবিবারের ছুটি বাড়তি উৎসাহ জুগিয়েছে আমজনতাকে। এ দিন সকাল থেকেই ভিড় দেখা গিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সকালে গত কয়েক দিনের তুলনায় সব চেয়ে বেশি ভিড় ছিল আলিপুর চিড়িয়াখানায়। সকাল থেকেই টিকিট কাউন্টারের বাইরে ছিল লম্বা লাইন। বেলা গড়াতেই ভিড়ের সঙ্গে সামনের রাস্তায় গাড়ির জট সামলাতে নাজেহাল হতে হয় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের। এ দিন ছেলেকে কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিরাজ দাশগুপ্ত। তিনি বললেন, ‘‘ছেলে বায়না করলেও ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ভিড়ের ভয়ে আসিনি। ফাঁকায় ফাঁকায় ঘুরব বলে ফেব্রুয়ারিতে এলাম। কিন্তু এসেও দেখছি ভিড় থেকে মুক্তি নেই!’’
এ দিন চিড়িয়াখানায় এসে পার্কিংয়ের জায়গা পেতেই কার্যত নাজেহাল হতে হয়েছে অনেককে। গাড়ির চাপ সামলাতে ব্যস্ত, চিড়িয়াখানার সামনে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী মন্তব্য করলেন, ‘‘সপ্তাহখানেক আগে গরমে এত ভিড় ছিল না। ফাঁকায় ফাঁকায় গোটাটা সামলানো যেত। ফের শীতের আমেজ ফিরতেই আমাদের কাজের চাপটা বেড়ে গিয়েছে।’’
চিড়িয়াখানার পাশাপাশি এ দিন ভিড় ছিল ভিক্টোরিয়া, জাদুঘর-সহ গোটা ময়দান চত্বরে। ভিক্টোরিয়ার সামনের ঘোড়ার গাড়িগুলিও ছিল চেনা ব্যস্ততায়। ময়দান এলাকার রাস্তা ধরে দেদার ঘোড়ার গাড়ি ঘুরতে দেখা গিয়েছে এ দিন। বেলার দিকে শহরের তাপমাত্রার সঙ্গে রোদের তেজ কিছুটা বাড়লেও শীতের চেনা ছবির বদল হয়নি। পিকনিকের মেজাজে চলেছে খেলাধুলো থেকে খাওয়া-দাওয়া।
একই ছবি ছিল গঙ্গার পাড়েও। শেষ বেলার শীতের আমেজ চেটেপুটে উপভোগ করতে ভিড় প্রিন্সেপ ঘাট চত্বরেও। অনেকে আবার শীতের আমেজে শহর ঘুরে বিকেলে বইমেলামুখী হয়েছেন। গঙ্গার পাড়ে বসা এক দল কমবয়সির মধ্যে ঈশিতা ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘শীত তো আর কয়েক দিন! যতটা উপভোগ করা যায় আর কী। বিকেলে এখান থেকে সোজা বইমেলা ঘুরে তার পরে বাড়ি।’’