জীবনকৃষ্ণ সাহা। —ফাইল চিত্র
জল আর জীবন পাশাপাশি শিরোনামে উঠে এসেছিল সে দিন। বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে সিবিআই হানা দেওয়ার পরই, তিনি পুকুরের জলে ছুড়ে ফেলেছিলেন মোবাইল ফোন। অনেক জলকাদা ঘাঁটিয়ে সেই মোবাইল উদ্ধার করাতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। ১৩ মাস পর, মঙ্গলবার দুপুরে জেলে বসে চোখের জলে ভাসলেন জীবনকৃষ্ণ। প্রেসিডেন্সি জেল সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্ট জামিন দিয়েছে শোনার পরই কেঁদে ফেলেন নিয়োগ মামলায় হেফাজতে থাকা বিধায়ক।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জামিন দিয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া জীবনকৃষ্ণকে। দিল্লি থেকে জামিন পাওয়ার খবর পৌঁছয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলেও। সেই জেলেই ২৫ নম্বর সেলে বন্দি রয়েছেন বিধায়ক। সেখানেই তাঁকে কাঁদতে দেখা যায়। অবশ্য জেলেরই আর একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিধায়ক এমনিতেই ‘আবেগপ্রবণ’। এর আগে শুনানির সময় তাঁকে যখন আদালতে হাজির করানো হত, তখন কখনও কখনও উপস্থিত থাকতেন তাঁর শিশুসন্তান। সন্তানের গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিত দেখা যেত তাঁকে।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত জীবনকৃষ্ণকে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। জামিনের আবেদন নিয়ে তিনি প্রথমে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে জীবনের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তার পরেই জামিন চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজ্যের শাসকদলের বিধায়ক।
মঙ্গলবার জীবনকৃষ্ণের জামিন সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এএস বোপান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের এজলাসে। জীবনকৃষ্ণের আইনজীবীরা জানান, নিয়োগ মামলার চার্জশিটে নাম থাকা ২৩ জনের মধ্যে ৯ জন গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাঁদের মধ্যে তিন জন জামিন পেয়ে যান। এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রসন্ন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জামিন পেয়েছেন। যদিও শীর্ষ আদালতে জীবনকৃষ্ণের জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই জানায়, বিধায়ক পুকুরে ফোন ছুড়ে ফেলে দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার তথ্যপ্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করেছেন। বিধায়কের ফোনের চ্যাট ঘেঁটে এক চাকরিপ্রার্থীর তাঁর কথোপকথনের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে বলে আদালতে জানায় সিবিআই।
নিয়োগ মামলার সূত্রে ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল জীবনকৃষ্ণের কান্দির বাড়িতে টানা তল্লাশি চালায় সিবিআই। একই সঙ্গে জীবনকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। অভিযোগ, সেই জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির ফাঁকে তাঁর ব্যবহার করা দু’টি মোবাইল ফোন বাড়ির পিছনে একটি পুকুরের জলে ফেলে দেন জীবনকৃষ্ণ। সেই মোবাইল উদ্ধার করতে পুকুরের জল ছেঁচে ফেলার ব্যবস্থা করতে হয় সিবিআইকে। টানা জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির পরে ১৭ এপ্রিল মাঝরাতে কলকাতা থেকে সিবিআইয়ের আরও একটি দল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কান্দির বাড়িতে গিয়ে জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করে। তার পর থেকেই বিচারাধীন বন্দি অবস্থায় ছিলেন জীবনকৃষ্ণ।