সায়নী ঘোষ। — ফাইল ছবি।
সন্তানের কাছে মা-ই তো ধ্রুবতারা। প্রকৃতির নিয়মে সেই ধ্রুবতারাও এক দিন সময়ের মেঘে ঢাকা পড়ে। কিন্তু চির বিদায় মানতে চায় না সন্তানের মন। বাস্তব তাকে মানতে বাধ্য করে বটে। আর এই অবুঝ অবাধ্যতার পাথেয় হয়ে ওঠে জীবনভর মায়ের সঙ্গে কাটানো নানা রঙের স্মৃতি। যুব তৃণমূলের সভানেত্রী তথা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের মাতৃবিয়োগের পর মাকে মনে করে তাঁর প্রথম সমাজমাধ্যম পোস্টেও সন্তানের সেই আকুলতাই। সেখানে সায়নী শরণ নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের। তাঁর লেখা গানের কথাতেই সদ্য হারানো মাকে খুঁজেছেন সায়নী। এক সন্ধ্যায় মা, মেয়ের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘গোধূলিগগনে মেঘে’ গানটির শেষ দু’টি লাইন। সঙ্গে শুধু, ‘ভাল থেকো মাগো!’
সোমবার, পৌষের শেষ দিন, মাকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন সায়নী। বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। শেষ দিকে রাখতে হয়েছিল ভেন্টিলেশনে। সোমবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ সায়নীকে ছেড়ে চিরকালের মতো অজানার পথে পাড়ি দেন সুদীপা ঘোষ। মাতৃবিয়োগে স্বভাবতই ভেঙে পড়েছেন সায়নী। সেই মেয়ের কাছেই মা ফিরে এলেন। তবে, বাস্তবে নয়, সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে।
মঙ্গলবার খুব ভোরে সায়নী নিজের সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন তাঁর সঙ্গে মায়ের একটি ছবি। যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সায়নী মায়ের কোলে শুয়ে আছেন চোখ বুজে। আর মা পরম মমতায় মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। মায়ের পোশাক একেবারেই ঘরোয়া। সায়নী যদিও পরে একটি ভাল দেখতে শাড়ি। বুঝতে অসুবিধা হয় না, মেয়ে বাইরে থেকে ফিরেছে ক্লান্ত হয়ে। আর এসেই মায়ের কোলে মাথা রেখে একটু আরাম। মৃদু হেসে মা মেয়ের আবদার পূরণ করছেন যত্ন করে। এই ছবিটি দিয়ে সায়নী লিখেছেন, ‘‘আর কি কখনও কবে, এমন সন্ধ্যা হবে? জনমের মতো হায়, হয়ে গেল হারা... ভাল থেকো মাগো!’’
সত্যি, এমন সন্ধ্যা আর কখনও আসবে না সায়নীর জীবনে। কিন্তু এই হারানোর ব্যঞ্জনা তো কতশত স্মৃতিতে ঠাঁসা। সময়ের স্রোতে দুঃখ যখন ফিকে হয়ে আসবে, মায়ের সঙ্গে কাটানো সেই স্মৃতির ভান্ডারই তো মেয়েকে বার বার টেনে আনবে মায়ের কাছে। সেই সন্ধ্যার মতো।