ফিরহাদ হাকিম।
বিধানসভা ভোটে জিতে তৃতীয় বার রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরেই দলে 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি চালু করেছে তৃণমূল। কলকাতা এবং হাওড়ায় পুরভোটের আগে এই নীতির কারণেই কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক (প্রাক্তন মেয়র) তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থা শাসকদলের অন্দরমহলে।
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতার মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিন্ধান্ত অনুযায়ী ফিরহাদকে ওই পদে বসানো হয়েছিল। পাশাপাশি, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীর দায়িত্বও ছিল তাঁর কাঁধে। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে পুরভোট হয়নি। তবে কলকাতার পুর প্রশাসকের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল ফিরহাদকেই। বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। বিধানসভা ভোটের পর দফতর বদল হয় মন্ত্রী ফিরহাদের।
পুর-নগরোন্নয়ন দফতরের বদলে মমতার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় ফিরহাদকে পরিবহণ ও আবাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিত্বের সঙ্গেই ফিরহাদ দায়িত্ব পালন করছেন কলকাতার পুর প্রশাসকের। ১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় পুরভোট হতে পারে। সেই ভোটে তৃণমূলের মেয়র পদপ্রার্থী কে হবেন? ইতিমধ্যেই শোনা যাচ্ছে, ওই পদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। অর্থাৎ, ফিরহাদ নন।
তৃণমূলের 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতিতে মেয়র বা মন্ত্রী— যে কোনও একটি পদে থাকতে পারবেন ফিরহাদ। সূত্রের খবর, প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক প্রস্তাব করেছে, মেয়র নয়, মন্ত্রী থাকুন ফিরহাদ। নতুন কোনও নির্বাচিত কাউন্সিলরকে করা হোক মেয়র। তৃণমূলের একটি সূত্রে আবার খবর, ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফিরহাদ নিজে পুরভোটে দাঁড়াতে ইচ্ছুক। ভবানীপুর উপনির্বাচনে তাঁর ভূমিকায় ‘সন্তুষ্ট’ মমতা তাঁকে পুরভোটে দাঁড়ানোর অনুমতি দিতেও পারেন বলেই এখনও খবর। কিন্তুবাদ সাধছে দলের 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি।
প্রসঙ্গত, ভোটের পর ওই নীতির কারণে ছয় মন্ত্রীকে তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। মধ্য হাওড়ার বিধায়ক অরূপ রায় হাওড়া সদর জেলা তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন। রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্বে ছিলেন হাওড়া পুরসভার পুর প্রশাসকের। মন্ত্রী হওয়ায় জেলা সভাপতি ও পুর প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অরূপকে। সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পঞ্চায়েত মন্ত্রী পুলক রায় ভোটে জিতে রাজ্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের মন্ত্রী হন। তিনি ছিলেন হাওড়া (গ্রামীন) জেলা তৃণমূলের সভাপতি। মন্ত্রী হওয়ায় তাঁকেও ছাড়তে হয়েছে জেলা সভাপতির পদ। বর্ধমান পূর্বের তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকেও সাংগঠনিক পদ ছাড়তে হয়েছে এই নীতির কারণে। তমলুকের বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি সেচমন্ত্রী হয়েছিলেন। মন্ত্রী হওয়ায় তাঁকে সরতে হয়েছে সভাপতি পদ থেকে। মন্ত্রী হওয়ার কারণেই রাজ্য মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী পথ ছেড়েছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী।
ওই উদাহরণ তুলে ধরে ফিরহাদের ক্ষেত্রেও একই পথ নিতে পারেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে ‘এক যাত্রায় পৃথক ফল’হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই তৃণমূলের বিভিন্ন সূত্রের দাবি।