—প্রতীকী চিত্র।
নারকেলডাঙায় কংগ্রেস নেতা ইমামউদ্দিন আনসারিকে কুপিয়ে খুন করার ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শহরে ফের রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটল। বৃহস্পতিবার রাতে ফুলবাগান থানা এলাকায় বাড়ির কাছেই এক বিজেপি কর্মীকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। জখম ওই বিজেপি কর্মীর নাম ইন্দর যাদব। ২৪ বছরের ইন্দর নারকেলডাঙা মেন রোডের বাসিন্দা। এই ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের নাম রাধে যাদব, রাজা ঠাকুর এবং শিবম রাম। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিজেপি। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইন্দরের অভিযোগ, পিস্তল, লোহার রড নিয়ে তাঁর উপরে হামলা চালানো হয়। মারধর করার পরে তাঁকে বাড়ির কাছেই একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। ইন্দরের মাথা এবং মুখ ফেটে গিয়েছে। দু’টি পা মারাত্মক জখম হয়েছে। ভেঙে গিয়েছে একটি পা। বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষের অভিযোগ, ‘‘ইন্দরকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করেছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। বিষয়টি নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাচ্ছি।’’ জখম ইন্দরকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে শুক্রবার তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিন ইন্দরকে ওই হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়।
ইন্দরের পরিবার সূত্রের খবর, তাঁদের আদি বাড়ি বিহারের মধুবনিতে। ওই যুবক এ শহরে অ্যাপ-ক্যাব চালান। হাসপাতাল থেকে ফোনে ইন্দর জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কাজ থেকে বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে সাড়ে ১২টা নাগাদ পাড়ারই এক বন্ধুর বাড়িতে শুতে যাচ্ছিলেন তিনি। ইন্দর বলেন, ‘‘রাস্তায় তৃণমূলের ১০-১২ জন ঘিরে ধরে। পিস্তলের বাট দিয়ে মেরে আমার মাথা ও মুখ ফাটিয়ে দেয়। লোহার রড দিয়ে পায়ে মারা হয়। সেই সঙ্গে চলতে থাকে লাথি-ঘুষি। আমি যাতে চিৎকার করতে না পারি, তার জন্য মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়া হয়েছিল। গামছা দিয়ে আমার গলা পেঁচিয়ে ধরা হয়। মারতে মারতে নিয়ে গিয়ে আমাকে বাড়ির কাছেই একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।’’ এই ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ করছে বিজেপি। এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।’’
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউই। ইন্দরের ভাই সুরজ যাদবের দাবি, ‘‘ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।’’ ইন্দরের বাবা বিনোদ যাদব বলেন, ‘‘ইন্দর মরে গিয়েছে ভেবে দুষ্কৃতীরা ওকে পুকুরে ফেলে দিয়ে চলে যায়। পুকুর থেকে কোনও মতে উঠে হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ির কাছে আসে ইন্দর।’’
লালবাজার সূত্রের খবর, অভিযুক্ত রাধে এবং ইন্দরেরা বিহারেও প্রতিবেশী। বহু দিন ধরেই রাধে ও ইন্দরের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। এর আগেও দু’জনের মধ্যে ঝগড়া-মারামারি হয়েছে। সম্প্রতি বিহারে একটি বিয়েবাড়িতে গিয়েও দু’জনের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল।