ছটপুজোয় নিয়মভঙ্গে একসুর তৃণমূল এবং বিজেপির, ভোট-রাজনীতি কি আসল কারণ?

এই নিয়মভঙ্গের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করার প্রশ্নে মন্তব্য করলেন না মুখ্যমন্ত্রী। আর মমতার সুরেই সুর মিলিয়ে বিজেপি বলল, পুলিশ দিয়ে মানুষকে আটকানো যায় না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২৯
Share:

শনিবার গোলপার্কের দিকে সরোবরের গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন পুজো করতে আসা লোকজনেরা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিয়ম না-মেনে ছটপুজোয় কেউ ঘাটে চলে গেলে তিনি পুলিশ দিয়ে লাঠি, গুলি চালাতে পারবেন না বলে দু’দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছটপুজোর প্রথম দিনে তাঁর ‘কথা’ রাখল পুলিশ-প্রশাসনও। পরিবেশ আদালতের নিষেধ সত্ত্বেও রবীন্দ্র সরোবরের দরজার তালা ভেঙে ছটপুজোয় জলাশয় ব্যবহার হল শনিবার। কোথাও পুলিশের দেখা মিলল না।

Advertisement

এই নিয়মভঙ্গের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করার প্রশ্নে মন্তব্য করলেন না মুখ্যমন্ত্রী। আর মমতার সুরেই সুর মিলিয়ে বিজেপি বলল, পুলিশ দিয়ে মানুষকে আটকানো যায় না। পরিবেশ সচেতনতা তৈরি করতে হয়। এ বার ছটপুজোয় কোনও জলাশয়কেই নষ্ট করা যাবে না বলে জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল। রবীন্দ্র সরোবরের জলাশয় যাতে ছটে ব্যবহার করা না যায়, সে জন্য এর চারদিকের সব ক’টি দরজা তালাবন্ধও ছিল। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একের পর এক তালা ভেঙে জলাশয়ের পাড়ে পৌঁছলেন ছট-পুণ্যার্থীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরোবরের ত্রিসীমানায় কোনও পুলিশ ছিল না। পুলিশ ছাড়াই শুধু তালা লাগিয়ে কেন কার্যত ‘অরক্ষিত’ রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

লাঠি-গুলি না-চালানোর যে আশ্বাস মমতা দিয়েছিলেন, তাতে ছট-পুণ্যার্থীরা ছাড়পত্র পেয়েছিলেন বলেই রাজনৈতিক শিবিরের অনেকের ধারণা। তবে সরাসরি জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের উল্লেখ না করেই রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘দুর্গাপুজোর ভাসান বন্ধ করার, ছট পুজো করতে না-দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। প্রশাসন কড়া হাতে মোকাবিলা করুক, সেই চেষ্টাই হচ্ছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও ধর্মের মানুষের ভাবাবেগকে আঘাত দিতে চান না। তাই বলেছেন, দুর্গাপুজোর মতোই ছটও পরম্পরা মেনেই হবে।’’ হিন্দিভাষীরা যাতে কোনও ভাবে ‘অসম্মানিত’ না-হন, তার জন্য তৃণমূল সরকার যে সচেষ্ট, তার ইঙ্গিত দিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘যত দিন মমতাদি আছেন, তত দিন হিন্দিভাষী মানুষ নিজেদের অধিকারে মাথা উঁচু করে বাংলায় থাকবেন।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

Advertisement

শনিবার তালা ভাঙার ‘নির্ঘণ্ট’

সরোবরের গেট সময়

• লেক গার্ডেন্স তিন নম্বর রেলগেটের সামনে সকাল সাড়ে ৭টা

• টালিগঞ্জ মাদার ডেয়ারির সামনে সকাল ৮টা

• কেআইটি স্টেডিয়াম সকাল ১০টা ৫৬ মিনিট

• মেনকা সিনেমার কাছে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট

• গোবিন্দপুর বেলা ১১টা ৩০ মিনিট

• বুদ্ধ মন্দিরের সামনে বেলা ১২টা ১০ মিনিট

• গোলপার্কের সামনে বিকেল ৩টে ৩০ মিনিট

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, ছটে পুলিশি হস্তক্ষেপ না করার পক্ষে রাজ্যে শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বিজেপি উভয়ের কার্যত একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কারণ আসলে ভোট-রাজনীতি। এ রাজ্যে বিহারী ভোট আনুমানিক পাঁচ শতাংশ। ফলে ওই ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার চেষ্টা তৃণমূল এবং বিজেপি— দু’তরফেরই আছে।

আরও পড়ুন: শৃঙ্খলার ছটে দূষণ থেকে রক্ষা সুভাষ সরোবরের

সে কারণেই শাসক নেতা-মন্ত্রীদের মতো বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও বলেন, ‘‘ছটের সঙ্গে মানুষের ভাবাবেগ জড়িয়ে আছে। পুলিশ দিয়ে মানুষকে আটকানো যায় না। পরিবেশের কথা বোঝানোর জন্য জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। দুর্গাপুজোর ভাসানের ক্ষেত্রে যেমন বিকল্প ব্যবস্থা করা গিয়েছে, ছটেও তেমনই বিকল্প পরিকাঠামো দরকার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement