পরিস্থিতি সামলাতে ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
শিশু মৃত্যুর জেরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তিলজলায়। ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল পুলিশের গাড়িতে। বিক্ষোভকারীদের লাগানো আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে পুলিশের গাড়ি। পাশাপাশি ইটবৃষ্টি হয় আগুন নেভাতে আসা দমকলের গাড়িতেও। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিলজলা উড়ালপুলে সম্পূর্ণ বন্ধ যান চলাচল। পরপর বাইকে আগুন লাগিয়ে দেন উন্মত্ত জনতা। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর বৃষ্টি হয়। বন্ডেল গেট, পিকনিক গার্ডেন অশান্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামলাতে ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছে পুলিশ। শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড় এবং লাঠিচার্জ। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয়। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন। এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস এবং লাঠি হাতে রাস্তায় নেমেছে র্যাফ।
রাস্তার পাশাপাশি, রেল অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন তিলজলার স্থানীয়রা। যার ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে শিয়ালদহের দক্ষিণ শাখার রেল চলাচল। অবরোধের কারণে প্রায় ২০টি ট্রেন লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চূড়ান্ত দুর্ভোগ যাত্রীদের।
শিশু খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অলোক কুমারকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সন্তান লাভের আশায় বিহারের এক তান্ত্রিকের কথা শুনে ওই ৭ বছরের শিশুকে খুন করেন নিঃসন্তান আলোক। সূত্রের খবর, পুলিশি জেরায় অভিযুক্ত নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। অভিযুক্ত তান্ত্রিককে ধরতেও বিহারে কলকাতা পুলিশের একটি দল পাঠানো হতে পারে।
রেল অবরোধের কারণে প্রায় ২০টি ট্রেন লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান, শিশুটিকে খুন করার পর তার দেহ হাত পা বেঁধে বস্তার ভিতর ফেলে রাখা হয়েছিল। মৃতের পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, রবিবার সকালে শিশুটিকে আবর্জনা ফেলার জন্য আবাসনের নীচে পাঠানো হয়েছিল। অনুমান, তখনই তাকে ঘরে নিয়ে যান দোতলার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা অলোক। তার পর ঘরের ভিতর তাঁর উপর নির্যাতন চালানো হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে বন্ডেলে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখান তিলজলার স্থানীয় বাসিন্দারা। নিহত শিশুর পরিবারের সদস্যেরা ছাড়াও রয়েছেন বহু স্থানীয় মানুষ। একটি বাস আটকে সেটির ছাদে চেপে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। বুকে পোস্টার লাগিয়ে এবং চিৎকার করে স্লোগান দিতেও দেখা যায় তাঁদের। অনেকেই রাস্তায় বসে পড়ে প্রতিবাদে শামিল হন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, অভিযুক্ত উপযুক্ত শাস্তি না পেলে তাঁরা লাগাতার প্রতিবাদ করতে থাকবেন।
পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। রবিবার রাতেও স্থানীয়রা তিলজলা থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। অভিযোগ, রবিবার সকাল থেকে শিশুটিকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে থানায় অভিযোগ জানালেও পুলিশ সঠিক পদক্ষেপ করেনি। রবিবার রাতে তিলজলা থানা লক্ষ্য করে ভাঙচুর চালান উত্তেজিত জনতা। পুলিশ এলাকা খালি করার জন্য লাঠি নিয়ে বেরোলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। থানায় ভাঙচুর চালানোর ঘটনায় তিন স্থানীয়কেও গ্রেফতার করে পুলিশ।