Crime

সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরেই অপরাধের কবলে মহিলারা

সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমার যুগে অপরাধীরা মহিলা এবং শিশুদের এমন ভাবেই কার্যত বাধ্য করছে যৌন ব্যবসায় নামতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বছর ষোলোর মেয়েটিকে ফেসবুকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠিয়েছিলেন এক সুবেশা মহিলা। বন্ধুত্ব স্বীকার করার পরে ফেসবুক মেসেঞ্জারে শুরু হয় দু’জনের কথাবার্তা। চলত ছবি আদানপ্রদানও। বন্ধুত্ব গাঢ় হতে কিশোরীকে ওই মহিলা বলেন, তার কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পাঠাতে। আগুপিছু না ভেবেই সেই ধরনের কিছু ছবি পাঠিয়ে দেয় মেয়েটি।

Advertisement

কিন্তু সে ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি, অন্য প্রান্তে থাকা মহিলা তার সেই সব ছবি পাঠিয়ে চলেছেন আরও অনেকের কাছে। শুধু তা-ই নয়। কেউ চাইলে ওই কিশোরীর সঙ্গে খানিকটা সময় কাটাতে পারে, এই মর্মে তিনি অনেকের কাছে আবেদনও করেছেন। সেই মতো একের পর এক ব্যক্তি ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। অভিযোগ, তখনই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবিগুলি দেখিয়ে কিশোরীকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করেন মহিলা। এ-ও বলেন, সে যদি তাঁর কথা মতো কাজ না করে, তা হলে সমস্ত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেওয়া হবে।

নিজের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে আসবে জেনেও ওই কিশোরী মহিলার কথা মতো কাজ করতে রাজি হয়। এর পরে মাসের পর মাস বেহালায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তাকে নামানো হয় যৌন ব্যবসায়। সম্প্রতি অভিযোগ পেয়ে বারুইপুরের কিশোরীটিকে উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘জাতপাতের চেয়েও ভয়ঙ্কর ধর্মের রাজনীতি’, বিস্ফোরক প্রীতীশ নন্দী

উপরের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমার যুগে অপরাধীরা মহিলা এবং শিশুদের এমন ভাবেই কার্যত বাধ্য করছে যৌন ব্যবসায় নামতে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের অগোচরে, তাঁদেরই ছবি নিয়ে তৈরি হয়ে যাচ্ছে পর্নোগ্রাফি। ঠিক যেমনটা ঘটেছে তেলঙ্গানার এক কিশোরীর ক্ষেত্রে। তার মা-বাবা দু’জনেই উচ্চ পদে সরকারি চাকরি করেন। বছর বারোর মেয়েকে খুব একটা সময় দিতে পারতেন না তাঁরা। একা থাকতে থাকতে মেয়েটি ফেসবুকে খুঁজে পায় এক মহিলাকে। শুরু হয় আলাপ-পরিচয়। তা গড়ায় ঘনিষ্ঠতায়। এক সময়ে কথাবার্তা চলাকালীন ওই মহিলা কিশোরীকে বলেন ওয়েবক্যাম চালু করে বিবস্ত্র হতে। সাতপাঁচ না ভেবে মেয়েটি সেই ছবি পাঠিয়ে দেয় তাঁকে। কিছু দিন পরে দেখা যায়, সব ছবি আপলোড হয়ে গিয়েছে পর্নোগ্রাফি সাইটে!

আরও পড়ুন: ধর্মের বিভাজনের বিরুদ্ধে ফের টিফো গ্যালারিতে

এই ধরনের সাইবার অপরাধের প্রবণতা যে ভবিষ্যতে মহিলা এবং শিশুদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠতে চলেছে, তা নিয়েই সোমবার শহরে হয়ে গেল এক কর্মশালা। যৌথ উদ্যোগে ছিল কলকাতা পুলিশের উইমেন্স গ্রিভান্স সেল এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ডিজিটাল যুগে মোবাইল এবং বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে কী ভাবে অপরাধের শিকার হচ্ছেন মহিলা এবং শিশুরা, তা বোঝাতে কর্মশালায় হাজির ছিলেন কলকাতা পুলিশের সব থানার প্রায় ১৫০ জন সাব-ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার অফিসার। উপস্থিত ছিলেন ডিসি (সাইবার ক্রাইম) অপরাজিতা রাই নিজেও। সাইবার অপরাধ যে বাড়ছে তা জানিয়ে তিনি উপস্থিত অফিসারদের বলেন সকলের বক্তব্য মন দিয়ে শুনতে। বোঝার অসুবিধা হলে যেন পুলিশকর্মীরা পাল্টা প্রশ্নও করেন, সেই নির্দেশও দেন।

এমন ধরনের সাইবার অপরাধ নিয়ে সম্প্রতি সামনে এসেছে একটি রিপোর্টও। আমেরিকার ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিল্ড্রেন (এনসিএমইসি) এবং ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো (এনসিআরবি) যৌথ ভাবে প্রকাশ করেছে সেই রিপোর্ট। তাতে বলা হয়েছে, গত ছ’মাসে ভারতবর্ষে ২৫ হাজার অপরাধের তথ্য দিনের আলোয় এসেছে, যেখানে শিশুদের পর্নোগ্রাফি আপলোড করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই তালিকায় দেশের মধ্যে দিল্লি শীর্ষে থাকলেও মহারাষ্ট্র, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের নামও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement