প্রতীকী ছবি।
আইপিএলের পরে বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও বেটিং চক্রের হদিস মিলল শহরে।
কলকাতায় সদ্য শেষ হওয়া আইপিএল ক্রিকেট ম্যাচে বেটিং চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে কমপক্ষে তেরো জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ধৃতদের থেকে একাধিক মোবাইল, ল্যাপটপ-সহ নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। এ বার সুদূর ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হতে না হতেই ফের বেটিং চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
গোয়েন্দাদের কাছে আগাম খবর ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেট ঘিরে বেটিংয়ের আসর বসেছে শহরে। সেই মতো লালবাজারের গোয়েন্দা দল শনিবার সন্ধ্যায় প্রথমে উত্তর কলকাতার রবীন্দ্র সরণির একটি দোকান থেকে দু’জনকে এবং রাতে বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ের একটি বহুতল থেকে এক জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম রাজকুমার লিহালা, অমিতকুমার গুপ্ত এবং সুরেশ রাঠি। তাঁদের রবিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক ৫ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখার জনা দশেক আধিকারিক মিলে জোড়াসাঁকো থানার ১৯২ রবীন্দ্র সরণি ঠিকানার একটি দোকানে হানা দেন। দোকানে গিয়ে দেখা যায়, দুই যুবক বেটিং চক্রের আসর বসিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। এর পরেই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। রাতেই তাঁদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের থেকে দু’টি মোবাইল ফোন, একটি টিভি সেট এবং এক লক্ষ দু’হাজার দু’শো টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয় বলে জানায় পুলিশ।
ওই দু’জনকে গ্রেফতার করার পরেই রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফের বড়তলা থানা এলাকার বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ের একটি বাড়িতে হানা দেন গোয়েন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়ির বাসিন্দা সুশীল রাঠিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেটিং চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। সুশীলের থেকে নগদ সাড়ে ছ’হাজার টাকা, মোবাইল এবং একটি ল্যাপটপ বাজোয়াপ্ত করে পুলিশ। সুশীলের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে তাঁর ভাই অশোক রাঠির পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আমার ভাই পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি সদ্য একটি রাজনৈতিক দল ছেড়ে অন্য একটিতে যোগ দিয়েছেন। এই কারণেই ভাইকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে।’’ রবিবার দুপুরে সুশীলকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে অভিযুক্তের আইনজীবী শ্রেষ্ঠা ঘোষ বলেন, ‘‘আমার মক্কেল এক জন ব্যবসায়ী। তাঁর কাছে ল্যাপটপ থাকতেই পারে। ওঁকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ অন্য দিকে, বেটিং চক্রে ধৃত আরও দুই অভিযুক্তের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী উদ্দালক দাশগুপ্ত এবং দোলা ভট্টাচার্য। উদ্দালকবাবু বলেন, ‘‘আমার মক্কেল অমিতকুমার গুপ্ত একটি দোকানে বসে মোবাইলে বিশ্বকাপের নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট খেলা দেখছিলেন। মোবাইলের অ্যাপ ডাউনলোড করে ক্রিকেট ম্যাচ দেখলেও পুলিশ দাবি করছে, ওটা আদতে বেটিং অ্যাপ। এই অভিযোগ মিথ্যা।’’ আর এক অভিযুক্ত রাজকুমার লিহালার পক্ষে সওয়াল করে তাঁর মক্কেলের জামিনের আর্জি জানান দোলা ভট্টাচার্য। এ দিন সরকারি পক্ষের কোনও আইনজীবী ছিলেন না। এ দিকে, এ দিন আদালতে তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘বেটিং চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ধৃতদের থেকে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। ভিন্ রাজ্যে গিয়ে তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।’’ ধৃতদের আরও কয়েক দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার আর্জি জানান তিনি।
উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে ব্যাঙ্কশাল কোর্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ধৃত তিন জনকে ৫ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।