Electricity Hooking

বন্দর এলাকায় হুকিং চক্রের রমরমা, কোন বাড়িতে ক’টা পাখা, ফ্রিজ, তার ভিত্তিতে ঠিক হয় ‘রেট’

একবালপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার পরেই পুলিশি তৎপরতা বেড়েছে বন্দর এলাকায়। হুকিং বন্ধে শুরু হয়েছে ধরপাকড়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৩ ০৭:০৮
Share:

বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের তার কাটার কাজ চলছে। গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজ এলাকায়। ফাইল চিত্র।

কারবারিদের রাজনৈতিক প্রভাব এড়িয়ে আদৌ কি কখনও বন্ধ হবে বিদ্যুৎ হুকিংয়ের ব্যবসা? সাময়িক ভাবে যদিও বা বন্ধ হয়, দিনকয়েক গেলেই ফের সেই চক্র সক্রিয় হয়ে উঠবে না তো? হুকিং বন্ধে বন্দর এলাকায় পুলিশি তৎপরতা শুরু হলেও এমনই আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের ধারণা, দু’-এক দিনের পুলিশি ধরপাকড়ে আপাতত সব ‘ঠান্ডা’ হলেও ফের ওই চক্র মাথাচাড়া দেবে।

Advertisement

একবালপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার পরেই পুলিশি তৎপরতা বেড়েছে বন্দর এলাকায়। হুকিং বন্ধে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। সিইএসসি-র করা হুকিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে মহম্মদ সাকিল ও সলমন সিদ্দিকি নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে একবালপুর থানার পুলিশ। এর পাশাপাশি, গার্ডেনরিচে তিন জনের ও ওয়াটগঞ্জে এক মহিলার খোঁজ করছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য জানাচ্ছেন, হুকিংয়ের কারবারিদের এই তালিকা আরও দীর্ঘ। এমনকি, তাঁদের অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচিতি বা রাজনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। সেই রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই এলাকায় হুকিং-চক্র আদৌ কখনও বন্ধ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ী তাঁরা। একবালপুরের ঘটনাস্থল সংলগ্ন এক দোকানির কথায়, ‘‘এখানকার হুকিং কারবারিদের কয়েক জনের নামে কার্যত বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায়! তাঁদের এই বেআইনি কারবার আটকাবে কে? শুধু কয়েক দিনের নীরবতা, তার পরেই আবার সবাই স্বমহিমায় ফিরবে।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গোটা বন্দর এলাকাতেই হুকিং-চক্রের রমরমা চলে। কার্যত এলাকা ভাগ করেই সিন্ডিকেটের কায়দায় গোটাটা পরিচালনা করেন চক্রের মাথারা। কোন বাড়িতে ক’টা পাখা, ক’টা ফ্রিজ, টিভি বা আলো জ্বলবে, সেই অনুযায়ী ‘রেট’ ঠিক করে দেন তাঁরা। আর এই কারবারিদের একাংশের রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় সব জেনেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীরা আরও জানান, ভোট এলেই ওই হুকিং কারবারিদের রাজনৈতিক প্রভাব বোঝা যায়। প্রভাবশালী নেতা-দাদাদের অনুগামী হয়ে কার্যত গোটা এলাকা দাপিয়ে বেড়ান তাঁরা। ভোটের সময়ে বিস্তর ধমক-চমকও করতে দেখা যায় তাঁদের। এঁদের অনেকে আবার বেআইনি নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, গোটা এলাকায় বেআইনি নির্মাণ-চক্র বন্ধ না হলে হুকিং-চক্রও বন্ধ করা যাবে না হয়তো। স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘এলাকার অলিগলিতে যে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, তাতে কাগজপত্রের কোনও বালাই নেই। সেই কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতেও সমস্যা হয়। তারই সুযোগ নেন হুকিং-চক্রীরা।’’

Advertisement

বাসিন্দাদের আরও দাবি, গত বছর কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পর পর কয়েক জনের মৃত্যুর পরেও এলাকায় পুলিশি তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। হুকিংয়ের বিরুদ্ধেও চলেছিল অভিযান। সেই সময়ে এলাকার হুকিং কারবারে কিছুটা লাগাম পড়েছিল। কিন্তুকয়েক দিন পরে সব ঠান্ডা হতেই ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেন চক্রের দাদারা। এ বারও যে তেমন কিছু হতে পারে, সেটাই মনে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

যদিও লালবাজারের পুলিশকর্তারা হুকিং বন্ধে সিইএসসি-র সঙ্গে যৌথ অভিযান চলবে বলেই জানাচ্ছেন। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘অপরাধীর রং দেখা পুলিশের কাজ নয়। বেআইনি কাজ করলে তাঁর বিরুদ্ধে রং না দেখেই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। হুকিং বন্ধেও সেই তৎপরতা থাকবে।’’ কিন্তু এত দিন কেন ছিল না? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য এড়িয়ে যান তিনি। সিইএসসি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘হুকিং বন্ধ করতে আমরা পুলিশকে সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত। আগেও আমরা পুলিশে অভিযোগ করেছি। হুকিংয়ের খবর পেলে প্রয়োজনে ফের পুলিশকে জানানো হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement