Presidency University

Presidency University: যতই কষ্ট হোক, অফলাইন ক্লাসই আমি করতে চাই

মঙ্গলবার যখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিঁড়িতে বসে ঘষটে ঘষটে নামছি, তখন মনে হচ্ছিল, যতই কষ্ট হোক, অফলাইন ক্লাসই আমি করতে চাই।

Advertisement

রোহিত রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৩৯
Share:

প্রেসিডেন্সিতে রোহিত রায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

স্বপ্ন ছিল, এক দিন প্রেসিডেন্সিতে পড়ব। কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে পাশ করে ভূগোল নিয়ে প্রেসিডেন্সিতে স্নাতকোত্তর পড়তে এসে সেই স্বপ্নই পূর্ণ হল। আমার বাড়ি নবদ্বীপে। পাড়ার অনেকে আমাকে দেখে মুখে কিছু না বললেও হাবেভাবে বুঝিয়ে দিতেন যে, আমার পক্ষে বাড়িতে বসে অনলাইন ক্লাস করাই ভাল। তা হলে আর মায়ের কোলে উঠে বাসে বা ট্রেনে চেপে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে হবে না। বাড়িতে বসেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারব।

Advertisement

কিন্তু মঙ্গলবার যখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিঁড়িতে বসে ঘষটে ঘষটে নামছি, তখন মনে হচ্ছিল, যতই কষ্ট হোক, অফলাইন ক্লাসই আমি করতে চাই। আজ, প্রথম দিনের ক্লাস করতে গিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে কোনও বাধা বলেই মনে হয়নি আমার।

আমি জন্ম থেকেই শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী। দুটো পা-ই অসাড়। হাঁটতে পারি না। মাটিতে ঘষটে ঘষটে চলতে হয়। রাস্তায় বেরোই হুইলচেয়ারে বা মা-বাবার কোলে চড়ে। এতটা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন কিন্তু থেমে যায়নি। কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে ৭১ শতাংশ নম্বর পেয়ে ভূগোলের স্নাতক হওয়ার পরে প্রেসিডেন্সিতে পেলাম স্নাতকোত্তরে পড়ার সুযোগ। এমন ঐতিহ্যশালী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ কেউ কি ছাড়ে? ভর্তি হয়ে গেলাম।

Advertisement

আজ, কলেজ খোলার প্রথম দিন প্রেসিডেন্সিতে দুটো ক্লাস করেছি। ভোরে মায়ের সঙ্গে নবদ্বীপ থেকে ট্রেনে চেপে বেরিয়েছিলাম। হাওড়া স্টেশনে নেমে মায়ের কোলে চেপেই বাস ধরে কলেজ স্ট্রিটে প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাসে এসেছি। ক্লাসরুমে ঢুকে বুঝেছি, এত দিন যে অনলাইন ক্লাস করেছি, তার সঙ্গে প্রেসিডেন্সির অফলাইন ক্লাসের কোনও তুলনাই চলে না। আমাকে সিঁড়ি দিয়ে ঘষটে ঘষটে নামতে দেখে প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ আমার জন্য একটি হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করে দেন। সেই সঙ্গেই তাঁরা দেখিয়ে দেন, কোন দিকে লিফট রয়েছে। আমাকে আর সিঁড়ি দিয়ে ওই ভাবে নামতে হবে না।

আমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। আমার বাবার নবদ্বীপে একটি মুদিখানা রয়েছে। আর্থিক অনটনের মধ্যেই মা রেবা রায় ও বাবা বানেশ্বর রায় আমাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন। আমিও স্বপ্ন দেখি ভূগোল নিয়ে এক দিন গবেষণা করার।

এখন সপ্তাহে এক দিন করে আসব প্রেসিডেন্সিতে। কিন্তু সব স্বাভাবিক হয়ে গেলে রোজ রোজ তো নবদ্বীপ থেকে এই ভাবে আসা সম্ভব নয়। আজই যেমন ক্লাস করে ফের ট্রেনে করে নবদ্বীপ ফিরতে রাত হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্সির হস্টেলেও থাকতে পারব না। কারণ, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে আমি মাকে ছাড়া থাকতে পারি না। তাই কলকাতায় একটা মেস বা ভাড়া বাড়ি খুঁজছি।

ছাত্র, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement