প্রতীকী ছবি।
নিজেদের মতো করে প্রায় সব পুজো কমিটিই ছাপাতে দিয়েছে পুজোর পাস। তবে ভিআইপি পাস নয়, সেগুলির উপরে লেখা থাকবে ‘ক্লাব ইনভাইটি’। বিষয়টি যদিও একই। মণ্ডপে থাকছে ভিআইপি গেট। ‘ক্লাব ইনভাইটি’ লেখা পাস দেখালেই সেখান দিয়ে ঢুকে প্রতিমা দর্শন করা যাবে ভিড় এড়িয়ে। এমন পাস ছাপানো হচ্ছে ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর তরফেও। ৪৯৯ টাকা দামের এমন এক-একটি পাসে প্রতিমা দর্শন করতে পারবেন সর্বাধিক তিন জন। দেখা যাবে বড়, ছোট, মাঝারি মিলিয়ে ফোরামের সদস্য প্রায় সব পুজো। অর্থাৎ, নাম বদলে এ বারের পুজোতেও থাকছে সেই ভিআইপি সংস্কৃতি!
২০১৯ সালে পুলিশ আয়োজিত পুজোর প্রস্তুতি বৈঠকে এই ভিআইপি সংস্কৃতি বদলের ডাক দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সে দিন বলেছিলেন, ‘‘আমার নিজের একটা বক্তব্য রয়েছে। আপনাদের হয়তো পছন্দ হবে না। তবু বলব, ভিআইপি গেট বাদ দিন। একদল মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, আর একদল ভিআইপি লাল গাড়ি ছুটিয়ে পুজো প্যান্ডেলে ঢুকে যাবে, এটা ঠিক নয়।’’ মঞ্চে তখন শ্রীভূমি, চেতলা, সুরুচির মতো চারটি বিখ্যাত পুজোর কর্মকর্তারা বসে। তাঁর বক্তব্য সমর্থনযোগ্য হলে হাত তুলতে বলে পুজোকর্তাদের সমর্থনও আদায় করে নেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু পরে এ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। ফোরামের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হয়। বলা হয়, ভিআইপি পাসের একটি বড় অংশ স্পনসরদের দেওয়া হয়। না দিলে বিজ্ঞাপন পেতে সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া, যে পাড়া বা ক্লাবের পুজো, সেখানকার লোকজনের জন্যও ভিআইপি গেট প্রয়োজন। ওই গেট না থাকলে পুজোর কাজে বা অঞ্জলি দিতে যেতেও বার বার লাইনে দাঁড়াতে হবে! বলা হয়, শারীরিক প্রতিবন্ধী থেকে শুরু করে অন্য দেশের বা অন্য রাজ্যের অনেক বিশিষ্ট মানুষজন পুজো দেখতে আসেন। তাঁদের পর্যটন দফতর পুজো দেখায়। তাঁদেরও কি লাইন দিয়ে ঢোকানো হবে? এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পরের নির্দেশ আর প্রকাশ্যে আসেনি। ওই বছর পুজোয় ভিআইপি পাস নিয়ে চরম বিভ্রান্তি দেখা যায়। কেউ রাতারাতি ‘ক্লাব ইনভাইটি’, কেউ আবার ‘ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি’ লিখে কার্ড ছাপান। নাম বদলে সেগুলিই হয়ে যায় ‘ভিআইপি পাস’। বেশ কিছু পুজোয় ভিআইপি গেট দিয়ে লোক ঢোকানো নিয়ে ঝামেলাও শুরু হয়ে যায়। অনেকেই বলতে থাকেন, মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও ভিআইপি সংস্কৃতি চালু থাকে কী করে? পরের দু’বছর করোনার জেরে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশই নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এ বার তেমন নিষেধাজ্ঞা আসবে না ধরে নিয়েই শুরু হয়েছে পাস ছাপানো।
ফোরামের সদস্য এক পুজোকর্তা বলেন, ‘‘ভিআইপি পাস বলুন আর ক্লাব ইনভাইটি, এই ধরনের ব্যবস্থা না রাখলে চলে না। এমন পাসে প্রচুর টাকা ওঠে। ফোরাম ৪৯৯ টাকার যে পাস বিক্রি করছে, সেই টাকার সিংহভাগই সদস্য ক্লাবগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। ১০ শতাংশ রাখবে ফোরাম। যা দিয়ে রক্তদান থেকে শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর মতো বহু কাজ করা হবে। হাতে গোনা দু’-একটি ক্লাব ফোরামের এই পুজো পাসে নাম দেয়নি। তারা হয় নিজেরা সরাসরি পাস বিক্রি করে, নয়তো ব্যানার, গেট স্পনসর করার বদলে দেয়।’’ এমনই একটি ক্লাব সুরুচি সঙ্ঘ। সেখানকার পুজোকর্তা স্বরূপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘২০১৯ সালের মতোই ক্লাব ইনভাইটি থাকছে। আমরাই ঠিক করি, ওই পাস কাকে দেব।’’ চেতলা অগ্রণীর পুজোকর্তা সমীর ঘোষের আবার দাবি, ‘‘ভিআইপি গেট তো রাখতেই হবে। ফোরাম একটা পাস করছে। আমরা নিজেরা কেমন পাস করব, এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’ শ্রীভূমির কর্তা দিব্যেন্দু গোস্বামীও বললেন, ‘‘ফোরামের পাসে আমরা নেই। ক্লাব ইনভাইটি থাকছে। আমরাই ঠিক করি, কাদের আমন্ত্রণ জানাব। যা ভিড় হয়, তাতে একটু আলাদা ব্যবস্থা না রাখলে হয় না।’’
অর্থাৎ, পুজোয় থেকে যাচ্ছে সেই অন্য নামের ‘ভিআইপি পাস’ই।