সঙ্কল্প: বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে অ্যামে। শুক্রবার, আইসিএইচে। নিজস্ব চিত্র।
তার দু’বছর বয়সে প্রথম ধরা পড়ে বৃক্কের (কিডনি) সমস্যা ‘নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম’। টানা চিকিৎসা চলার পরে ১২ বছর বয়সে গিয়ে পরিস্থিতি খানিক স্থিতিশীল হয়। মাঝের ১০ বছর আরও অনেক শিশুকে বৃক্কের সমস্যায় ভুগতে দেখেছিল সে দিনের ছোট্ট বালক। তখন থেকেই মনে মনে সঙ্কল্প করেছিল, ওদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
সেই মতো বন্ধু, আত্মীয়, পরিজনদের থেকে অনুদান সংগ্রহ করে ইতিমধ্যেই তিনটি শিশুর বৃক্ক প্রতিস্থাপনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আজকের ১৫ বছরের কিশোর সেই অ্যামে আগারওয়াল। ছেলের ইচ্ছায় উৎসাহ জুগিয়েছেন বাবা শশাঙ্ক আগারওয়াল ও মা রুমি আগারওয়াল। তাঁদের কথায়, “নিজের সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়েই দুঃস্থ শিশু ও তাদের বাবা-মায়ের কষ্ট উপলব্ধি করেছিলাম। তাই ছেলের ইচ্ছায় বাধা দিইনি।” এই কাজের জন্য রীতিমতো একটি গোষ্ঠী গড়ে ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ’ (আইসিএইচ)-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে অ্যামে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে যাঁরা সহযোগিতার হাত বাড়ান, তাঁরা সরাসরি অনুদান পাঠান হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে।
শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে শিশুদের বৃক্কের চিকিৎসার সুবিধা থাকলেও, প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তাই সেখানকার প্রতিস্থাপনগুলি হয় সিএমআরআই হাসপাতালে। শেষ এক বছরে সেখানে আইসিএইচ-এর তরফে চার জন শিশুর বৃক্ক প্রতিস্থাপন হয়েছে। আইসিএইচ-এর কার্যকরী অধিকর্তা, চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, “হাসপাতাল চত্বরে ১১তলা বাড়ি হবে। সেখানে বৃক্ক প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।” সেই কাজে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্কল্প করেছে অ্যামে। তার কথায়, “কাউকে সুস্থ জীবন দেওয়ার থেকে বড় উপহার কিছু হতে পারে না।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে অপূর্ব-সহ উপস্থিত আইসিএইচের অধ্যক্ষ জয়দেব রায়, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজিস্ট রাজীব সিংহ জানান, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে যদি ১০ লক্ষ দু’বছরের শিশু থাকে, তাদের ১০ জন ক্রনিক কিডনি ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত। তার মধ্যে বেশি পাওয়া যায় নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম। কারণ, জন্মগত ত্রুটির কারণে এই সমস্যা হয়। আবার কারও ওষুধ, সংক্রমণ, অন্য কোনও রোগ বা জিনগত কারণে এই রোগ হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শরীরের বর্জ্য পদার্থকে ছাঁকনির মাধ্যমে শরীর থেকে বার করে দেয় বৃক্ক। এই ছাঁকনির সমস্যাই হল নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম। যাতে প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে অত্যধিক মাত্রায় প্রোটিন বেরোয়।
অপূর্ব জানান, অনেক সময়েই দেখা যায়, বাচ্চাদের চোখ ফোলা। বহু ক্ষেত্রেই বাবা-মা মনে করেন, বেশি ঘুমের জন্য এমনটা হয়েছে। দিনের পর দিন এমন ফোলা ভাব দেখলে সেটিকে অবহেলা করা যাবে না। কারণ, নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমে এমন উপসর্গ থাকে। তিনি এটাও জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই সর্দি-কাশি ছাড়া শিশুর জ্বর হয়। সে ক্ষেত্রে প্রস্রাব পরীক্ষা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো ঠিক নয়। কারণ, বাচ্চাদের মধ্যে অনেকেরই মূত্রনালির সংক্রমণ দেখা যায়। তাতে বৃক্কের উপরেও প্রভাব পড়ে।
রাজীব জানান, নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত বাচ্চাদের চোখের পাতা, পেট, গোড়ালি ফুলে যায়, প্রস্রাব কমে যায়। যা দেখা দিয়েছিল অ্যামেরও। পরীক্ষায় জানা যায়, সে বৃক্কের সমস্যায় আক্রান্ত। এর পর থেকে রাজীবের কাছেই চিকিৎসা চলছে তার। জয়দেব জানান, নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমে আক্রান্তদের দুই-তৃতীয়াংশকে স্টেরয়েডেই কাজ হয়। এক-তৃতীয়াংশের প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘স্টেরয়েড দিয়ে অনেকের ভাল কাজ হয়। কিছু জনের স্টেরয়েড বন্ধ হলে রোগ ফিরে আসে। যে এক-তৃতীয়াংশের স্টেরয়েডে কাজ হয় না, তা জিনগত সমস্যার ফল।’’ বাড়ির খুদেরও যে বৃক্কের সমস্যা হতে পারে, সেই বিষয়ে অনেকেই সচেতন নন। তাই সচেতনতা বাড়ানোয় জোর দেন চিকিৎসকেরা। এ দিন নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমের উপরে একটি বইও প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে কলকাতায় ইটালির কনসাল জেনারেল গিয়ানলিউকা রুবাগোত্তি-সহ অন্যেরা ছিলেন।