সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তনিমা চট্টোপাধ্যায়
‘এত চেয়ার তো রাখা যাবে না ম্যাডাম।’
স্থানীয় থানার ওসি-র কথা শুনে খানিকটা বিব্রত জোড়া পাতা প্রতীকের নির্দল প্রার্থী তনিমা চট্টোপাধ্যায়। ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে, বালিগঞ্জের সত্যভামা ইনস্টিটিউশন ফর বয়েজ় স্কুলের উল্টো দিকের ফুটপাতে তিনটি চেয়ার নিয়ে বসে তখন ‘দুর্গ’ আগলাচ্ছেন সদ্যপ্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা। বললেন, ‘‘একটা চেয়ার অন্তত থাকুক। আমি তো প্রার্থী!’’
‘‘বসুন, তবে আর কেউ কিন্তু নয়’’— এ কথা বলে চলে গেলেন অফিসার। তনিমার আক্ষেপ, ‘‘দাদা থাকলে আজ কি আর এমনটা হত!’’
যদিও বোনের জন্য সুব্রতবাবুর কথা মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও অন্য কারও জন্য এমনটা শোনা হত না বলেই দাবি জোড়া পাতা প্রতীকের আর এক নির্দল প্রার্থী সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের এই নির্দল প্রার্থী এ দিন বেশির ভাগ সময়ে ছিলেন বাড়ির সামনেই। মাঝেমধ্যে বাইকে চেপে এলাকা ঘুরে এসে বাড়ির সামনে কয়েক জন অনুগামীকে নিয়ে ফোনেই খবরাখবর নিলেন তিনি। তার ফাঁকে তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি সচ্চিদানন্দের আক্ষেপ, ‘‘দলের দরকারে রেখেছিল। এখন হয়তো আর দরকার নেই।’’
২০০৪ সালে ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে প্রথম জয় সচ্চিদানন্দের। ২০০৫ সালে ফের জয়লাভ। ২০১০ সালে ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়। সচ্চিদানন্দের দাবি, ‘‘পরিবারের একটা আদর্শ আছে। ওয়ার্ডে যে মহিলারা সারা বছর দলের জন্য খাটেন, তাঁদের বাদ দিয়ে আমার স্ত্রীর প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব মেনে নিইনি।’’ সে বছর ৭০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে ২০১৫ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান। কিন্তু ২০১৫ সালে ওই ওয়ার্ডে বিজেপির কাছে হেরে যান তিনি। কিন্তু কেন তাঁকে পুরনো ওয়ার্ডে ফিরিয়ে আনা হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও খোঁজেন প্রবীণ ওই নেতা। তাঁর দাবি, ‘‘২০১৬-এ দলের সদস্যপদ নবীকরণের জন্যেও বলা হয়নি। অর্থাৎ সদস্যই তো নই। নির্দল হয়ে লড়তে অসুবিধা কোথায়?’’
তা হলে ৬৮ এবং ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে ঘাসফুলের সঙ্গেই কি লড়ছে জোড়া পাতা?
তনিমা-সচ্চিদানন্দের জবাব, ‘‘একদমই নয়।’’ নাম না করলেও স্থানীয় এক নেতার বিরুদ্ধেই তাঁর লড়াই বলে জানালেন সচ্চিদানন্দ। আর ব্যক্তি সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই তাঁর লড়াই বলে সরাসরি জানালেন তনিমা। বললেন, ‘‘দাদা বলেছিলেন, ৬৮ নম্বরে দাঁড়াবি। অন্য কেউ প্রার্থী হলে নির্দলেও দাঁড়াতাম না।’’ প্রতিপক্ষ সুদর্শনার প্রতিক্রিয়া, ‘‘জনগণই জবাব দেবেন।’’
এ দিন ভোরে লেক কালীবাড়িতে পুজো দিয়ে, ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সামনের ভোটকেন্দ্রকেই ‘পাখির চোখ’ করেছেন তনিমা। তাঁর ব্যানার, গাড়ির স্টিকারে সুব্রতবাবুর সঙ্গে তাঁর ছবি। ‘ভোটের দিন মাথা ঠান্ডা রেখে,
উড়ো খবরে কান না দিয়ে, যেখানে গরমিলের সম্ভাবনা আছে বলে নিজে মনে করবে সেখানেই ঘাঁটি গেড়ে থাকবে’— দাদার সেই পরামর্শ মেনে বিকেল পর্যন্ত সত্যভামা স্কুলের সামনেই কেটেছে বোনের। কয়েকটি জায়গায় এজেন্ট বসাতে না পারার অভিযোগ তুলেছেন তনিমা-সচ্চিদানন্দ দু’জনেই। তবে তাঁর প্রতি পুরনো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের সহানুভূতিতেই আস্থা রাখছেন সচ্চিদানন্দ। আর ৭২ নম্বরের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা তৃণমূল প্রার্থী সন্দীপরঞ্জন বক্সী বলছেন, ‘‘জনগণই বিচার করবেন।’’