শুনশান: ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে বাসের ভিড় উধাও। বৃহস্পতিবার, হাওড়া স্টেশন চত্বরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে আজ, শুক্রবার সকাল থেকে শহর এক প্রকার অচল হতে চলেছে। মেট্রো এবং শহরতলির ট্রেন পরিষেবা সারা দিন মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও রাস্তায় বেরিয়ে বাস, অটো, ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাবের কারণে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হতে পারেন। দুপুর ৩টের পরে হাতে গোনা বাস পথে নামলেও সন্ধ্যার দিকে বেসরকারি বাস কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।
শহরের দুই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হাওড়া এবং শিয়ালদহে নিরাপত্তার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মেট্রোর দক্ষিণেশ্বর, দমদম, শ্যামবাজার, মহাত্মা গান্ধী রোড, চাঁদনি চক, এসপ্লানেড, পার্ক স্ট্রিট, ময়দান, রবীন্দ্র সদন, যতীন দাস পার্ক, কালীঘাট, মহানায়ক উত্তমকুমার এবং কবি সুভাষ স্টেশনে ভিড় নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। ওই ১৩টি স্টেশনে ১২০ জন আরপিএফ আধিকারিক সমন্বয় রেখে কাজ করবেন। মেট্রোর প্রবেশপথে যাতে ভিড় না হয়, সে জন্য মেট্রো রেল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। তৈরি থাকবে কুইক রেসপন্স টিম। ভিড় হতে পারে, এমন স্টেশনে বাড়তি টিকিট কাউন্টার খোলা হবে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ, করুণাময়ী এবং সেন্ট্রাল পার্ক স্টেশনের ভিড় নিয়ন্ত্রণে রক্ষী মোতায়েন থাকবে।
ভিড়ের আশঙ্কা রয়েছে ফেরিঘাটেও। সমাবেশে যোগ দিতে আসা কর্মী-সমর্থকদের বেশির ভাগ বাসে এলেও উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু অঞ্চল ও নদিয়া থেকে শহরতলির লোকাল ট্রেনে তাঁদের একাংশ আসবেন। উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থক ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছেন। তার পরেও আজ সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকেই শিয়ালদহ স্টেশনে ভিড় উপচে পড়বে বলে অনুমান। এই কারণে নিত্যযাত্রীরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য স্টেশনে যাতায়াতের পথে রক্ষী মোতায়েন করা হচ্ছে।
শহর সচল রাখায় ভরসা যে মেট্রো, আজ তার পরিষেবা শুরু হবে সপ্তাহের অন্য দিনের মতো সকাল ৬টা ৫০ মিনিটেই। অফিসের ব্যস্ত সময়ে পাঁচ মিনিট অন্তর ও পরে ৬-৭ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন চলবে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো ১৫ মিনিট অন্তর সকাল ৬টা ৫৫ মিনিট থেকে মিলবে।
স্বাভাবিক সূচি অনুযায়ী, শিয়ালদহ ডিভিশনে কাজের দিনে সর্বাধিক ৯২০টি শহরতলির ট্রেন চলে। এ বার একুশে জুলাই তেমনই একটি কাজের দিন হওয়ায় ট্রেনের ব্যবধান অন্য দিনের মতোই থাকছে। তবে বাড়তি ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না বলে রেল সূত্রের খবর। দুই মেদিনীপুর , হাওড়া এবং হুগলি থেকেও সমাবেশে কর্মী-সমর্থকদের আসার কথা। সকাল থেকে হাওড়া স্টেশনে তাই ভিড় হতে পারে। প্রতি মুহূর্তে ভিড়ের উপরে নজর রাখা হবে বলে রেল সূত্রের খবর।
এসপ্লানেডের সভামঞ্চে আসার জন্য পুলিশ যে সব রাস্তা নির্দিষ্ট করেছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্রেবোর্ন রোড, এ জে সি বসু রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, জওহরলাল নেহরু রোড, খিদিরপুর রোড এবং সিআইটি রোড। ওই সব রাস্তা সকাল ৯টা থেকে সমাবেশমুখী বাস, গাড়ি এবং মিছিলে ভরে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। সকালে প্রথম দিকের দু’-এক ঘণ্টা বাদ দিলে হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশনের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে বেগ পেতে হতে পারে। দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে শালিমার, সাঁতরাগাছি, কলকাতা স্টেশনে পৌঁছতেও সমস্যা হতে পারে। বিমানবন্দর ফেরত যাত্রীরা একমাত্র নিউ টাউনের দিক দিয়ে এলে কিছুটা যানজট এড়াতে পারবেন বলে অনুমান।
সরকারি বাসও কতটা মিলবে, আশঙ্কা রয়েছে। সমাবেশের জন্য বেশির ভাগ রুটের বেসরকারি বাস এবং মিনিবাস তুলে নেওয়ায় পথে অমিল থাকবে বাস, জানিয়েছে বাসমালিক সংগঠন। উত্তরে ডানলপ এবং দক্ষিণে টালিগঞ্জের মধ্যে বাস, মিনিবাস কার্যত চলবে না। বাইপাস, সল্টলেক, সেক্টর ফাইভ, নিউ টাউন দিয়ে অল্প কিছু বাস চলতে পারে। খিদিরপুর, বেহালা, ডায়মন্ড হারবার রোড এবং দক্ষিণের গড়িয়াহাট চত্বর বাসশূন্য থাকার আশঙ্কা প্রবল।