যুবক ‘জায়ান্ট সার্পেন্টাইন অ্যানুরিজ়ম’-এ আক্রান্ত। প্রতীকী ছবি।
শেষ ছ’মাস ধরে কমছিল না মাথার যন্ত্রণা। মাঝেমধ্যে মারাত্মক বাড়ছিল। কেউ বলছিলেন, কাজের চাপ। কেউ গ্যাস-অম্বলের দোহাই দিচ্ছিলেন। কোনও ওষুধেই ব্যথা কমছিল না। শেষে পরীক্ষায় ধরা পড়ল, মাথার ডান দিকের রক্তবাহী ধমনী (মিডল সেরিব্রাল আর্টারি) মারাত্মক ফুলে, সাপের মতো এঁকেবেঁকে রয়েছে!
যে কোনও মুহূর্তে মাথার ওই যন্ত্রণাই প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারত বছর পঁয়ত্রিশের যুবক মার্ফাদ হুসেনের। ধমনী ফেটে রক্তক্ষরণ হয়ে শরীরের বাঁ দিকে পক্ষাঘাতের আশঙ্কাও ছিল। তাই, মুর্শিদাবাদের ওই যুবককে দেখে আর দেরি করেননি এসএসকেএমের বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেসের (বিআইএন) চিকিৎসকেরা। রোগ ধরতে ‘ডিএসএ’ (ডিজিটাল সাবসেকশন অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফি), অর্থাৎ কুঁচকির কাছে ফুটো করে সেখান দিয়ে মস্তিষ্কে ক্যাথিটার পাঠিয়ে তোলা হয় ছবি। দেখা যায়, ওই যুবক ‘জায়ান্ট সার্পেন্টাইন অ্যানুরিজ়ম’-এ আক্রান্ত। বিরল ওই রোগ থেকে বাঁচাতে তড়িঘড়ি ধমনীটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। বিআইএনের স্নায়ু মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় বলেন, ‘‘এই ঘটনা প্রমাণ করে, মাথার যন্ত্রণাকে সাধারণ ভাবার কারণ নেই। মস্তিষ্কের অনেক জটিল সমস্যার প্রাথমিক উপসর্গই হল, মাথার যন্ত্রণা। ঠিক সময়ে চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব।’’
সম্প্রতি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মার্ফাদ। বিআইএনের ‘ডিএসএ’ কেন্দ্রের চিকিৎসক শুভদীপ গুপ্তের কথায়, ‘‘বিশ্বে ৫০-১০০টি এমন রোগে আক্রান্তের কথা শোনা যায়। যদিও নির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান নেই।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ওই ধমনীর মধ্যে দিয়ে বেলুন নিয়ে গিয়ে প্রতি ১০ মিনিটে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেখা হচ্ছিল, রোগীর বাঁ দিক দুর্বল হচ্ছে কি না। সেই সময়ে হাই তোলা, জোরে শ্বাস নেওয়া থেকেও বিরত রাখতে হয়েছিল রোগীকে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে রোগীকে সম্পূর্ণ সজাগ রেখে প্রক্রিয়াটি চালানোর পরেই পাকাপাকি ভাবে ‘ইন্ট্রা সেরিব্রাল কয়েল’ দিয়ে ধমনীটির রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করা হয়।
রাজ্যে স্ট্রোকের চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র হয়েছে বিআইএন। নিউরো মেডিসিন বিভাগের তরফে বিমান, শুভদীপ ছাড়াও চিকিৎসক দীপ দাস, অর্পণ দত্ত ডিএসএ-র দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, শেষ এক বছরে ৫০ জন রোগীর এমন জটিল প্রক্রিয়া করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে স্ট্রোকে মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া, রক্তক্ষরণ হওয়া, জন্মগত ভাবে মস্তিষ্কে ধমনী ও শিরা জড়িয়ে থাকা এবং মস্তিষ্কের শিরা সরু হয়ে যাওয়া রোগীরা রয়েছেন। এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেসরকারি ক্ষেত্রে ডিএসএ প্রক্রিয়ায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। সেখানে বিনামূল্যে বিআইএনে এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। যা আগামী দিনে আরও বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে।’’